কৌশলগত সংলাপে ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’

বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখবে যুক্তরাজ্য

ব্রেক্সিট সত্ত্বেও বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। বৃহস্পতিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপ শেষে দ্বিতীয় বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপের সভাপতি স্যার সাইমন ম্যাকডোনাল্ড এই প্রতিশ্রুতি দেন। যুক্তরাজ্যের ‘ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ’ বিভাগের এই সচিবের দেওয়া প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। বাংলাদেশের পশ্চিম ইউরোপ এবং ইউবিষয়ক মহাপরিচালক মোঃ খোরশেদ এ খাস্তগীর বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় কৌশলগত সংলাপে ‘ফলপ্রসূ আলোচনার’ দাবি করেছে দুই পক্ষই। আলোচনায় বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ছাড়াও শিক্ষা, পোশাক শ্রমিকদের অধিকার ও রোহিঙ্গা সংকট প্রাধান্য পেয়েছে।
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিতীয় কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত

দ্বিতীয় বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপের সভাপতিত্ব করেছেন যুক্তরাজ্যের ‘ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ’ বিভাগের সচিব স্যার সাইমন ম্যাকডোনাল্ড। বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহিদুল হক। ম্যাকডোনাল্ড বলেছেন, ‘এই কৌশলগত সংলাপ এমন এক সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। আমি পুনরায় নিশ্চিত করেছি, ইউ ত্যাগ করার পরেও বাংলাদেশী পণ্য বিনা শুল্কে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে।’ আর হক বলেছেন, ‘ইইউ ত্যাগ করার পরেও বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের বিষয়টি যে যুক্তরাজ্য দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করেছে সেটিকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আবার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকরা ব্রিটেনের সমাজ ও উন্নয়নে যে অবদান রাখছেন তা আমারা তুলে ধরেছি।’ 

যুক্তরাজ্য বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চালু থাকা ঢাকা ও সিলেটের কেন্দ্রগুলোতে মানসম্পন্ন সেবার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে যুক্তক্তরাজ্য জানিয়েছে প্রত্যাশা করে, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সব বাধা দূর করে এমন আইন তৈরি করতে হবে বাংলাদেশকে যাতে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশে কাজ করতে পারে। দুই দেশই নারী ও মেয়ে শিশুদের শিক্ষার গুরুত্বের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। যেসব বাংলাদেশী অভিবাসীর যুক্তরাজ্যে থাকার বৈধ মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে সহযোগিতা করায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশকে অভিনন্দনও জানিয়েছে দেশটি। তাছাড়া, বিশ্ব ব্যাংকের ‘ডুইং বিজনেস ইনডেক্সে’ বাংলাদেশের ক্রমোন্নতিতেও সন্তোষ জানিয়েছে তারা। 

দারিদ্র বিমোচনে বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়ে একমত পোষণ করে দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেছেন, ‘ব্রেক্সিট পরবর্তী ও অনুন্নয়নশীল ধাপপরবর্তী সন্ধিক্ষণে একটি নতুন সম্পর্কে তৈরিতে দ্বিতীয় এই কৌশলগত সংলাপ আমাদেরকে আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে। নারী, মেয়ে শিশু ও প্রতিবন্ধীসহ সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে উদ্ভাবন, জ্ঞান, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা প্রণয়নে একমত হয়েছি আমরা।’ 

যুক্তরাজ্য আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, পোশাক শিল্পে মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশ তৎপরতা চালিয়ে যাবে। দুই দেশই টেকসই উন্নয়নের জন্য ‘২০৩০ এজেন্ডা ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির দ্রুত ও কার্যকর বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। শ্রমশোষণ ও মানবপাচার রোধে দুই দেশ সমন্বিত কৌশল গ্রহণের বিষয়েও একমত হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ কমনওয়েলথের বিষয়ে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন কমন ওয়েলথ সম্মেলনের সফলতা কামনা করেছে।

২০২২ সালে ঢাকা ও লন্ডনে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করা হবে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দেশই। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য গত বছরই প্রথম সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ এই কৌশলগত সংলাপের আয়োজন করে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে তৃতীয় কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালে ঢাকায়।

বাংলাদেশের পশ্চিম ইউরোপ এবং ইউবিষয়ক মহাপরিচালক মোঃ খরশেদ এ খাস্তগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এ ধরণের কৌশলগত সংলাপে দুই দেশের সরকার বিভিন্ন বিষয়ে একে অপরের কাছে তাদের নিজ নিজ মতামত তুলে ধরতে পারে। এই সংলাপ এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করছে আর আর বাংলাদেশ ক্রমেই মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দিকে আগাচ্ছে। দুই পক্ষের বাস্তবতাই ভিন্ন ভিন্ন দিকে পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা আমাদের প্রয়োজনগুলো গুরুত্ব অনুযায়ী বাছাই করছি এবং দুই পক্ষেরই লাভ হয় এমন একটি সমঝোতায় উপনীত হওয়ার চেষ্টা করছি।’

ইউ ত্যাগের পরও যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে বাংলাদেশের পণ্য। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে কার্যক্রম চালাতে পারে সেজন্য যাথাযথ আইন প্রণয়ন করবে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্য অঙ্গীকার করেছে, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় ঢাকা ও সিলেটে কাজ করা কেন্দ্রগুলোকে আরও বেশি মানসম্মত করা হবে। দুই দেশের তরফ থেকেই সংলাপে ফলপ্রসূ আলোচনা হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।