নিরপরাধ ৭ কৃষককে হত্যা করে তালেবান সদস্য আখ্যা দিচ্ছে আফগান বাহিনী?

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশের দুটি গ্রামে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আফগান গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত সাত নিরপরাধ কৃষক নিহত হয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, শনিবার (১৭ মার্চ) দিনের আলো ফোটার আগেই কথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কথা বলে নিরাপত্তা বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়লে এ প্রাণহানি হয়। কৃষকরা তখন মাঠে কাজ করছিলেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরে বিক্ষোভ করার সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের ছোড়া গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, অভিযানের সময় মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের উপদেষ্টারাও উপস্থিত ছিলেন। তবে আফগান কর্মকর্তা ও ন্যাটো রিসলিউট সাপোর্ট থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। ন্যাটো রিসলিউটের দাবি, নিহতরা তালেবান সদস্য। হেলিকপ্টার দিয়ে অভিযান পরিচালনার কথাও অস্বীকার করেছে তারা। আফগান কর্তৃপক্ষের দাবি, এটি স্থল অভিযান ছিল।

`নিরপরাধ` কৃষক নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ
জাতিসংঘের আফগানিস্তান সংক্রান্ত মিশন (ইউএনএএমএ) এর সাম্প্রতিক একটি জরিপে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে আফগান বিশেষ বাহিনীর তল্লাশি অভিযানে ৬১ বেসামরিক নিহত হয়েছে। কখনও মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আবার কখনও আফগান নিরাপত্তা বাহিনী একাই এ অভিযান চালিয়েছে। শনিবার একইরকম করে নানগারহারের মানো ও ইদিয়াখেল গ্রামে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী।

নানগারহারের মানো গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ রাজাক। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘মাঝরাত থেকে আমরা ফসলে পানি দিচ্ছিলাম। ভোর চারটার শুনতে পেলাম একটি হেলিকপ্টার আমাদের দিকে আসছে। হেলিকপ্টার থেকে ঠিক দুইবার গুলি করা হলো। আমার দুই চাচাতো ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।’ রাজাকের দাবি, তারা যে রাত থেকে ক্ষেতে কাজ করবে তা নিরাপত্তা বাহিনীর আউটপোস্টে আগেই জানিয়ে রাখা হয়েছিল। তারপরও হামলা করা হয়েছে। রাজাক বলেন, ‘গরিব ও নিরপরাধ মানুষরা এখানে কাজ করতে পারে সে কথা বিবেচনায় না নিয়েই হামলা চালানো হয়েছে।’

মানো থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ইদিয়াখেল গ্রামের অবস্থান। প্রত্যক্ষদর্শীকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানায়, পাঁচ কৃষক একটি মসজিদের ভেতরে ছিলেন। হঠাৎই নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে হামলে পড়ে এবং গুলি করতে শুরু করে। নামের শেষাংশ প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে মোহাম্মদ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সম্ভবত জঙ্গিরা মসজিদে লুকিয়ে আছে এমন গোপন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ওই অভিযানে ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয় বলেও জানান তিনি। মোহাম্মদ বলেন, ‘মসজিদের ভেতরে থাকা পাঁচজনের সবাই কৃষক। তারা আমার বাড়ির পাশের একটি খামারে কাজ করতো।’

নিহত সাত কৃষকের একজন
আজমল ওমর নামে প্রাদেশিক কাউন্সিলের এক সদস্য আল জাজিরার কাছে নিশ্চিত করেছেন, ক্ষেত ও মসজিদে লুকিয়ে থাকা তালেবান যোদ্ধাদের নিশানা করে অভিযান চালানো হয়েছে। নিরপরাধ বেসামরিক নিহত হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন: ‘এ ধরনের অভিযানে বেসামরিকরা নিহত হয় যা গভীর উদ্বেগের। অতীতে বেশ কয়েকবার বেসামরিক নিহত হওয়ার কথা আমরা সরকার ও সেনাবাহিনীকে জানিয়েছি। বলেছি, নিরপরাধ ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনা এড়াতে এ ধরনের অভিযান চালানোর আগে যথাযথ গোয়েন্দা তথ্য থাকা উচিত।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, আফগান বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে সম্ভবত মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের উপদেষ্টারা ছিলেন। তবে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী ও ন্যাটো রিসলিউট তা অস্বীকার করেছে। ন্যাটো রিসলিউট সাপোর্টের জনসংযোগ পরিচালক টম গ্রেসবাক আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা জেনেছি আফগান বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী নানগারহার প্রদেশের চাপারহার জেলায় ১৭ মার্চ ভোরের দিকে একটি স্থল অভিযান চালিয়েছে।’

গ্রেস আরও দাবি করেন, ‘আমাদের জানামতে অভিযানে কোনও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়নি। আমরা জেনেছি বেশ কয়েকজন তালেবান নিহত হয়েছে এবং ২০ জন সন্দেহভাজন তালেবান সদস্যকে আটক করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত করতে পারি, অভিযান চলার সময় ন্যাটো কিংবা মার্কিন বাহিনীর কেউ ছিল না।’

অভিযানে তালেবান সদস্যরা নিহত হয়েছে বলে গ্রেসবাকের করা দাবিটি নাকচ করে দিয়েছেন স্থানীয়রা। নিহতদের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভও করেছেন তারা। চাপারহারের রাস্তায় বিক্ষোভরতদের উপর পুলিশ গুলি ছুড়লে এক বিক্ষোভকারী নিহত এবং দুইজন আহত হয়।