যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেলেন বাংলাদেশি অধ্যাপক

যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে ভিসা জটিলতায় গ্রেফতারকৃত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অধ্যাপক সৈয়দ জামাল মুক্তি পেয়েছেন।  মার্কিন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের হেফাজতে ৫৫ দিন থাকার পর মঙ্গলবার নিজের পরিবারের কাছে ফিরেছেন তিনি।

dacc221e798d77837f2ee8c8dc935646-5a8533e5da5d9

গত ফেব্রুয়ারিতে তার মামলাটি ইমিগ্রেশন আপিল বোর্ড থেকে পুনর্বিবেচনার কথা বলা হলে তখনই একজন ফেডারেল বিচারক মুক্তির নির্দেশ দেন। এরপরও তার মুক্তি পেতে চলে গেছে অনেক সময়। মুক্তির নির্দেশের পরও স্বজনরা তার সঙ্গে শুধু রবিবার দেখা করতে পারতেন। মাঝে থাকতো কাঁচের দেয়াল।

সরকারপক্ষের আইনজীবী তার মুক্তির বিরোধিতা করলেও ফেডারেল বিচারক বলেন, ‘আবেদনকারীকে নজরদারিতে রেখে তার পরিবারের কাছে যেতে দিলে কি ক্ষতি?’ এসময় আদালতে অধ্যাপকের শতাধিক সমর্থক উল্লাস করে ‍ওঠেন।

মুক্তি পেয়ে যথন তিনি আদালতের বাইরে আসেন তখন আবেগঘন পরিবেশ। সৈয়দ জামালকে কাছে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরছেন স্বজনরা। তার ছোট ছেলে ফরিদ বলছিলেন, ‘বাবা তোমাকে কতদিন দেখি না।’ তার স্ত্রী অ্যাঞ্জেলা চৌধুরী বাংলাদেশি কমিউনিটির সবাইকে তাদের সহায়তা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এখন আমি তাকে স্পর্শ করতে পারি।তার সঙ্গে কথা বলতে পারি। সন্তানরাও তাকে পেয়ে খুশি।

তবে মুক্তির পরও তার অভিবাসন অবস্থা অপরিবর্তিত থাকছে। তার আইনজীবী রেখা শর্মা ক্রফোর্ড বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য সামনে তার আরও কঠিন সময় আসছে। সৈয়দ জামালও বলেন, ‘এটা খুব কঠিন সময়। এবার আমার পরিবারকেও আদালতের ‍মুখোমুখি হতে পারে।’ তবে এই মুহূর্তে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন জামাল।

সামনের মাসে আবারও এই মামলার শুনানি হবে। আইনজীবীরা জানান, পুরোপুরি মামলার নিষ্পত্তি হতে আরও কয়েকমাস লাগতে পারে।

১৯৮৭ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন সৈয়দ আহমেদ জামাল। তিনি মলিক্যুলার বায়োসায়েন্স ও ফার্মাসিউটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি অত্যন্ত দক্ষ কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য এইচ১বি ভিসায় চিলড্রেন্স মার্সি হাসপাতালে কাজ করেন। পরে পিএইচডি করার জন্য তিনি আবার শিক্ষার্থী ভিসা গ্রহণ করেন।২০১১ সালে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয় তবে তাকে নজরদারির শর্তে থাকতে দেওয়া হয়। ওয়ার্ক পারমিটের জন্য নিয়মিতই তাকে অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে হতো।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ফিরে আসার আগ মুহূর্তে তার ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে একটি স্থগিতাদেশ আসে। অধ্যাপক জামালকে গ্রেফতারের সময় তিনি টেম্পোরারি ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কানসাসের পার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। একইসঙ্গে স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে গবেষণা কাজেও সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। ভিসা সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে দেশে ফেরার মতো পরিস্থিতির মুখে পড়েন সৈয়দ আহমেদ জামাল।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি সকালে নিজ বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে সবেমাত্র বাসা থেকে বের হচ্ছিলেন। এ সময় ঘর থেকে স্ত্রী-সন্তানরা বেরিয়ে এলেও তাদের সঙ্গে কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়েই অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে হাতকড়া পরিয়ে ধরে নিয়ে যান। এ ঘটনায় স্থানীয়রা অধ্যাপক জামালের পক্ষে ব্যাপক সমর্থন গড়ে তোলেন। তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর আদেশ বাতিলের দাবিতে এরই মধ্যে চেঞ্জ ডট অর্গ ওয়েবসাইটে এক অনলাইন পিটিশনে এক লাখেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।