প্রশান্ত মহাসাগরে পড়লো চীনের মহাকাশ স্টেশন

প্রশান্ত মহাসাগরে পড়েছে অকেজো হয়ে পড়া চীনা মহাকাশ স্টেশন টিয়াংগং-১-এর ধ্বংসাবশেষ। গ্রিনিচ মান সময় ২ এপ্রিল সোমবার রাত ১২টা ১৫ মিনিটে মহাকাশ স্টেশনটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। তবে পানিতে পড়ার আগে এর অধিকাংশ অংশই পুড়ে গেছে।  চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ঝিনহুয়ার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

4A6F3F8A00000578-5553117-The_Tiangong_1_space_station_artist_s_impression_is_hurtling_tow-a-34_1522254495143

এর আগে টিয়াংগং পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়বে বলে জানানো হলেও কোথায় পড়বে তা নিশ্চিত করতে পারছিল না কেউ। এই মহাকাশ গবেষণা স্টেশনটি চীনের উচ্চাভিলাষী মহাকাশ কর্মসূচির অন্যতম প্রধান অংশ ছিল। চীনের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২২ সাল নাগাদ মানুষের বসবাসের উপযোগী একটি মহাকাশ কেন্দ্র মহাশূন্যে পাঠানোর। টিয়াংগং-১ ছিল তারই পূর্ব প্রস্তুতি।

খবরে বলা হয়, মার্কিন সেনাবাহিনীও মহাকাশ যানটির পৃথিবীতে ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিষয়টি নিয়ে দেশটির জয়েন্ট ফোর্স স্পেস কম্পোনেন্ট কমান্ড একটি বিবৃতিও দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার তুলনায় মহাকাশে চীনের যাত্রা অল্পদিন আগের ঘটনা। ২০০১ সালে প্রথম চীন মহাকাশে জন্তু পাঠায়। তারপর ২০০৩ সালে প্রথমবার চীনা কোনও নভোচারী মহাকাশে যান। ২০১১ সালে এসে চীন প্রথম মহাকাশ স্টেশন পাঠায়, যার নাম টিয়াংগং ১ বা স্বর্গের প্রাসাদ। ১০ দশমিক ৩ মিটার লম্বা এই মহাকাশ কেন্দ্রে মানুষ যেতে পারতো, তবে অল্প ক’দিনের জন্য। ২০১২ সালে একজন নারী নভোচারী টিয়াংগংয়ে গিয়েছিলেন। দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের মার্চের পর থেকে এটি আর কাজ করছিল না।

বিজ্ঞানীরা আগেই বলেছিলেন, ভয়ের কিছু নেই। যদিও এই মহাকাশ স্টেশনটির ওজন ৮ দশমিক ৫ মেট্রিক টন কিন্তু বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে এটি টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। তবে তেলের ট্যাংক বা রকেট ইঞ্জিনের মতো যন্ত্রগুলো হয়তো পুরোপুরি ভস্মীভূত না-ও হতে পারে। যদি না হয়, তাহলেও এগুলো কোনও মানুষের ওপর এসে পড়বে; এমন সম্ভাবনা কম। অস্ট্রেলিয়ার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের ড. এলিয়াস আবোটানিয়োস বলেন, এসব ক্ষেত্রে ধ্বংসাবশেষের সিংহভাগই গিয়ে পড়ে সাগরে।

চীনা মহাকাশ স্টেশন টিয়াংগং-১

গত ডিসেম্বরে চীন জাতিসংঘকে এক বিবৃতিতে বলেছিল, এ বছরের মার্চ মাসের শেষ দিকে টিয়াংগং পৃথিবীতে ফিরে আসবে।

মহাকাশ যানটির এমন পরিণতিতে চীনের নাগরিকরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখছেন ‘গুডবাই টিয়াংগং’। কেউ কেউ চীনা মহাকাশ সংস্থাকে দোষারোপ করছেন। একজন লিখেছেন, ‘ফিরে আসছে? সবাই জানে এটা ক্র্যাশ করেছে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘বিদায় টিয়াংগং-১, তুমি আমাদের হিরো।’

চীনা ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস সোমবার বলেছে, মহাকাশ যানটির পৃথিবীতে ফেরা নিয়ে বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমের প্রচারণায় বিদেশে চীনা মহাকাশ শিল্পের প্রতি বিদ্বেষ ফুটে উঠেছে।

এতে বলা হয়, মহাকাশ যানের পৃথিবীতে ফিরে আসাটা  স্বাভাবিক ঘটনা। তারপরও টিয়াংগং-১ উদ্দেশ্যমূলকভাবে সবার চেয়ে বেশি মনোযোগ কেড়েছে। কারণ, কিছু পশ্চিমা দেশ চীনের দ্রুত বর্ধনশীল মহাকাশ শিল্পের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করছে।