জিএম তুলা নিয়ে মনসান্টোর বিরুদ্ধে ভারতীয় আদালতের রায়

বুধবার ভারতের একটি আদালত রায় দিয়েছে, জেনেটিকালি মোডিফায়েড তুলা বীজের মালিকানা দাবি করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনও টাকা চাইতে পারবে না মনসান্টো। কৃত্রিমভাবে ডিএনএ পরিবর্তন করে শস্যের উন্নত জাতের প্রজাতি বানানোর ব্যবসা করা মনসান্টো ভারতীয় আদালতের ওই রায়ে তীব্র হতাশা ব্যক্ত করেছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ভারত সরকারের রয়ালিটি কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২০১৬ সালেই দেশটি থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।

মোনসান্টো

নজিভিড়ু সিডস লিমিটেড (এনএসএল) নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভারতীয় আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখ করে আদালতে তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। পেটেন্ট করার যোগ্য এমন বিষয়গুলো থেকে শস্য বীজকে বাদ দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় ওই আইনে। সংস্থাটি আদালতে বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের কোনও বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ভারতে পেটেন্ট করার ও ভারতীয় বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রায়ালিটি দাবি করার আইনসংগত সুযোগ নেই। এনএসএলের কর্মকর্তা মুরালি কৃষ্ণা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আদালত ‘এনএসএলের’ সঙ্গে একমত হয়ে রায় দিয়েছে, ভারতের পেটেন্ট আইন অনুযায়ী মনসান্টো তাদের জিএম তুলা বীজের জন্য পেটেন্টও করতে পারবে না, কোনও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রয়ালিটিও দাবি করতে পারবে না।

অন্যদিকে মনসান্টোর ভারতীয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আদালতের ওই সিদ্ধান্তে তারা গভীরভাবে হতাশ। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আজকের রায়ের কারণে ভারতের বিভিন্ন খাতে জৈবপ্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণার ওপর সুদূর প্রসারী ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে। এই রায় কৃষি গবেষণায় এগিয়ে যাওয়া অন্যান্য দেশের আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’ ভারতের ‘ন্যাশনাল সিড এসোসিয়েশনের’ পরিচালক কল্যাণ গোস্বামী মনসান্টোর দাবির প্রেক্ষিতে মন্তব্য করেছেন, ‘আজকের রায়ে তাদের দাবির অসত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।’ অনেকগুলো বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জিএম বীজ নিয়ে মনসান্টোর সঙ্গে সমঝোতা করে ফেললেও এনএসএল নামের বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি হাল ছাড়েনি। তাদের লড়াইয়ের কারণেই শেষ পর্যন্ত বীজের মালিকানা মনসান্টোর হাতে যায়নি। ভারতে বীজের রয়ালিটি নিয়ে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই চালিয়ে আসছে মনসান্টো।

রয়টার্স জানিয়েছে, ২০১৬ সালে ভারত সরকার দেশটি থেকে মনসান্টোর দাবি করা রয়ালিটির পরিমাণ ৭০ শতাংশ হ্রাসের সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সরকারি পর্যায়ে বিবাদ দেখা দিয়েছিল। মার্চ মাসে এসে ভারতের সরকার মনসান্টোর দাবি করা রয়ালিটির পরিমাণ আরও এক দফা হ্রাস করিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। উল্লেখ্য, কৃত্রিমভাবে ডিএনএ পরিবর্তন করা তুলা বীজ থেকেই ভারতের ৯০ শতাংশ তুলা উৎপাদিত হয়।