কাঠুয়ায় শিশু আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিচার শুরু আজ

জম্মু-কাশ্মিরের কাঠুয়া অঞ্চলের যাযাবর মুসলিম বাকারওয়াল গোষ্ঠীর ৮ বছর বয়সী মেয়ে আসিফা বানুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আট অভিযুক্তের বিচার শুরু হচ্ছে আজ (সোমবার, ১৬ এপ্রিল)। অভিযুক্তদের মধ্যে এক কিশোরও রয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাপ্তবয়স্ক সাতজনের বিচার দায়রা জজ আদালতে শুরু হবে, আর কিশোর অপরাধ আইন অনুযায়ী নির্ধারিত আদালতে বিচার হবে ওই কিশোরের। অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীরা ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় হিন্দু-মুসলিম প্রশ্ন তুলে বিচার প্রক্রিয়ার মেরুকরণ ঠেকাতে এবং ধর্মীয় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে দুজন শিখ কৌঁসুলি নিয়োগ দিয়েছে জম্মু-কাশ্মির সরকার।

শিশু আসিফার জন্য ন্যায়বিচারের দাবি আরেক শিশুর
এ বছরের জানুয়ারিতে কাঠুয়ার উপত্যকায় ঘোড়া চড়ানোর সময় অপহরণ করা হয় আসিফাকে। আদালতে দায়ের করা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, আসিফা নামের ওই শিশুকে অপহরণের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও দেবীস্থান মন্দিদের হেফাজতকারী সানজি রামই তার ভাগ্নে ও একজন পুলিশ সদস্যকে নির্দেশ দেয়। নির্দেশ বাস্তবায়নের পর সাত দিন ধরে মন্দিরে আটকে রেখে একদল হিন্দু পুরুষ ধর্ষণ করে আসিফাকে। পরে মাথায় পাথর মেরে ও গলা টিপে হত্যা করা হয় তাকে। আসিফাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটজনকে অভিযুক্ত করেছে ভারতের আদালত। মধ্য জানুয়ারির ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) দিন অভিযোগপত্র জনসম্মুখে আনা হয়। জানুয়ারিতে এ নিয়ে তেমন উত্তেজনা না হলেও এ ঘটনায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর সোচ্চার হয়ে ওঠে বলিউডসহ সারা ভারত। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি জানায়, অভিযোগপত্রের একটিতে সাত অভিযুক্তের নাম আছে। আরেকটিতে অভিযুক্ত কিশোরের নাম আছে। আইন অনুযায়ী কাঠুয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রাপ্তবয়স্ক সাতজনের বিচার দায়রা জজ আদালতে শুরু করছেন। আর কিশোর অপরাধ আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অভিযুক্ত কিশোরের বিরুদ্ধে বিশেষায়িত আদালতে বিচার হবে। অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী দুই ধর্মের হওয়ায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কথা বলে হিন্দু-মুসলিম কৌঁসুলি নিয়োগ দেয়নি জম্মু-কাশ্মির সরকার। মামলার স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে দুই শিখ সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অপরাধ শাখার দায়ের করা অভিযোগপত্রে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এলাকা থেকে সংখ্যালঘু যাযাবর সম্প্রদায়কে নির্মূল করে দিতে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অভিযোগপত্রে দেবীস্থান মন্দিরের কেয়ারটেকার সানজি রামকে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সানজি রাম ছাড়াও বিশেষ পুলিশ কর্মকর্তা দীপক খাজুরিয়া ও সুরেন্দর ভার্মা, সানজি রামের বন্ধু পরভেশ কুমার, সানজির ভাতিজা (কিশোর অপরাধী) এবং সানজির পুত্র বিশাল জনগোত্রার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা এবং প্রধান কনস্টেবল তিলক রাজ, সাব-ইন্সপেক্টর আনন্দ দত্তের নামও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা সানজি রামের কাছ থেকে ৪ লাখ রুপি ঘুষ নিয়ে অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এ আট অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
কাঠুয়ার ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার বিক্ষোভে উত্তাল ছিল গোটা ভারত। রবিবার বিকেল ৫টা থেকে দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, ভোপাল, আহমেদাবাদ‌সহ দেশের নানা জায়গার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। ন্যায় বিচার দাবি করেন তারা। দিল্লিতে সমতাস্থলে ৩ দিন ধরে অনির্দিষ্টকালের অনশনে বসেছেন দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন স্বাতী মালিওয়াল। এদিন তার সঙ্গে গিয়ে অনশনে যোগ দেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

এদিকে জম্মু বার অ্যাসোসিয়েশন ও অভিযুক্তদের পক্ষে বিক্ষোভ দেখানো আইনজীবীদের বিরুদ্ধে তদন্তে যাচ্ছে বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার একটি দল। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাতিল হবে আইনজীবীদের লাইসেন্স। সুপ্রিম কোর্টের ধমক খেয়ে কাঠুয়ার আইনজীবীরাও পিছু হটেছেন। অভিযুক্তদের বিনা খরচে আইনি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব তারা ফিরিয়ে নিচ্ছেন।