রোহিঙ্গা প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত পদক্ষেপ চাইছেন বাংলাদেশ সফররত মার্কিন দূত

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন বাংলাদেশ সফররত মার্কিন কূটনীতিক স্যাম ব্রাউনবেক। বুধবার বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যান স্যাম। বৃহস্পতিবার টেলিফোনে (১৯ এপ্রিল) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে ‘শ্বাসরুদ্ধকর’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। মিয়ানমারে সংঘটিত জাতিগত নিধনকে নিজের অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি হিসেবে দেখছেন ব্রাউনবেক।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। 

বুধবার (১৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে স্যাম ব্রাউনবেকসহ একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকা থেকে বিশেষ বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছায়। দুপুরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ‘ট্রানজিট রোহিঙ্গা ক্যাম্প’ পরিদর্শন করেন তারা। বৃহস্পতিবার ব্রাউনবেক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে মিয়ানমারের রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে টেলিফোনে বলেন, ‘এখানকার সহিংসতার তীব্রতা এবং ব্যাপ্তি শ্বাসরুদ্ধকর।’

ব্রাউনবেক
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানকে ‘ধর্মীয় নিধনযজ্ঞ’ আখ্যা দিয়েছেন ব্রাউনবেক। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার পর ব্রাউনবেক বলেন, ‘গতকাল প্রত্যেকে বলেছে, মুসলিম বলেই তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইমামদের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্রাউনবেক। তারা জানিয়েছেন, ‘মিয়ানমারের সেনারা তাদেরকে পিটিয়েছে এবং সেনা কর্তৃক নারীদের ধর্ষণের দৃশ্য দেখতে বাধ্য করেছে।’ ব্রাউনবেক জানান, তিনি টেলিফোনে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনে এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আগ্রহ রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড তদন্ত করছে উল্লেখ করে ব্রাউনবেক আরও বলেন, তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরসনে ‘জোরালো চাপ’ প্রয়োগ করা যাবে।

কানসাসের সাবেক গভর্নর স্যাম গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসনের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক দূত নির্বাচিত হন। তখন মুসলিম অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকা সংগঠনগুলো আশঙ্কা ছিল, ব্রাউনবেক মুসলিম অধিকারের সুরক্ষায় লড়বেন না। কারণ গভর্নর থাকাকালীন ২০১২ সালে তিনি শরিয়াসহ মুসলিমদের সুবিধা দেয় এমন আরও কয়েকটি আইন বাতিল করে নতুন আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন। নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে কানসাসে সিরীয় শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য ওবামা প্রশাসনকে সহায়তা দেননি তিনি। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসলিমবিরোধী অবস্থান দেখানো ব্রাউনবেক রোহিঙ্গাদের অধিকারের প্রশ্নে সরব হওয়ায় কেউ কেউ বিস্মিত হয়েছেন। যেসব রোহিঙ্গা সংগঠন ব্রাউনবেককে নিয়ে সংশয়ী হয়ে উঠেছিলেন, তারা রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করায় ব্রাউনবেকের প্রশংসা করেছেন।