আইন মেনে চলতে বললেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান

আইন মেনে চলার জন্য মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লায়াং। রোহিঙ্গাদের হত্যার অভিযোগে সাত সেনা সদস্যকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এ আহ্বান জানান তিনি। একটি সামরিক স্কুলে বক্তব্য দেওয়ার সময় মিন অং বলেন, সেনা সদস্যদের ‘অবশ্যই সামরিক আচরণবিধি ও আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি মেনে চলতে হবে।  বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের ফেসবুকে প্রকাশিত একটি পোস্টকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবরটি জানিয়েছে।

মিন অং হ্লায়াং
অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সামরিক-বৌদ্ধতন্ত্রের প্রচারণায় রাখাইনে ছড়ানো হয়েছে রোহিঙ্গা-বিদ্বেষ। ২০১৭ সালের আগস্টে অভিযান জোরদার করার আগের কয়েক মাসের সেনাপ্রচারণায় সেই বিদ্বেষ জোরালো হয়। এরপর শুরু হয় সেনা-নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণ ও ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করা হয় ৬ লাখ ৯২ হাজার মানুষকে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলীয় গ্রাম ইনদিনে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা ১০ রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের রাখা হয় গণকবরে। ঘটনার সরেজমিন অনুসন্ধানে নেমেছিলেন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। ডিসেম্বরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর অভিযোগ আনা হয় দাফতরিক গোপনীয়তা ভঙ্গের আইনে।

ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রয়টার্সকে জানায়, ঘটনার অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেই তদন্তের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত ৭ সেনাকে এপ্রিলে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সম্প্রতি সেনাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে সে সাজার  প্রসঙ্গ টেনে আনেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লায়াং। তিনি বলেন, ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেনেভা কনভেনশনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ইন দিন গ্রামের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে; সামরিক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন র‍্যাংকের সেনা সদস্য যারা আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত শিবিরে থাকা এক রোহিঙ্গা শিশু
মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী অং সান সুচি’র বেসামরিক সরকারকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে হয়। সেদিক থেকে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন। সেনাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় রোহিঙ্গাদেরকে আবারও ‘বাঙালি জঙ্গি’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাখাইনে বাঙালি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান বৈধ প্রত্যাক্রমণ।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।