সম্পর্কের বরফ গলাতে চীন সফরে যাচ্ছেন মোদি

শিগগিরই চীন সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কে দীর্ঘ উত্তেজনার বরফ গলানোই এ সফরের লক্ষ্য। রবিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

নরেন্দ্র মোদিভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোকলামের সংঘাতকালীন মওসুমের সেই বাহুবলী পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসে এখন মেরামতের কূটনীতির পথে হাঁটতে চাইছেন মোদি। তার সেই বার্তা নিয়েই এসসিও (সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন)-র সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে বেইজিং পৌঁছেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সঙ্গে অদৃশ্য আমন্ত্রণের সিলবন্ধ খাম।

সেই আমন্ত্রণ আপাতত চীনের রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য নয়। দিল্লি চাইছে, জুন মাসে চিনের কিংদাও প্রদেশে এসসিও সম্মেলনে মোদির সফর যেমন রয়েছে, তা সেভাবেই থাকুক। কিন্তু তার আগেই এ মাসের শেষদিকে বেইজিং সফরে যেতে পারেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।

চীনের শীর্ষ কূটনীতিক স্টেট কাউন্সিলর ওয়াঙ্গ ই-ও চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদির আসন্ন সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সম্ভাব্য এই সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন মোদি। এসসিও-র বহুপাক্ষিক ভিড়ের মঞ্চে দ্বিপাক্ষিক সংলাপের গুরুত্ব কিছুটা লঘু হয়ে যেতে পারে বলেই মনে করছে দিল্লির পররাষ্ট্র দফতর। তাছাড়া এসসিও সম্মেলন এতোটাই আঁটোসাটো যে ভারত–চীনের পৃথক আলোচনার পরিসর তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া কষ্টকর।

এখনও স্পষ্ট নয়, শেষ পর্যন্ত এই আয়োজন করে ওঠা সম্ভব হবে কিনা। কিন্তু মে এবং জুন— পরপর দুই মাসে মোদির দুইবার চীন সফর যদি বাস্তবায়িত করা যায়, তবে তা নিঃসন্দেহে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কূটনীতিতে এক অভিনব নজির গড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট, প্রতিবেশী প্রশ্নে কোণঠাসা ভারত এখন চীনের সঙ্গে তিক্ততার মাত্রা কমিয়ে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক উন্নত করতে বেশ উদগ্রীব। দিল্লি কোনওভাবেই চাইছে না যে, চীনের সঙ্গে ভারতের শত্রুতার সুযোগ নিয়ে এই উপমহাদেশে বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিক পাকিস্তান। গত এক বছরে চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। চীনা বাজারে ভারতীয় পণ্য রফতানি বাড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কমানোটাও মোদির অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক একবার হোক বা পরপর দুই মাসে দুই বারই হোক—ডোকলাম থেকে শুরু করে দ্বিপাক্ষিক সব বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে খোলা মনে আলোচনা করতে চায় দিল্লি। চীন সফরে এই বার্তাই সে দেশের নেতৃত্বকে দেবেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

২০১৮ সালের গোড়ার দিকেই চীন নিয়ে কিছুটা নরম সুরে চলার সিদ্ধান্ত নেন মোদি। চালু করা হয়েছে নিয়মিত দূতিয়ালি। নতুন পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে নিজেও বেইজিং সফর করেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকেও চীনে পাঠানো হয়। আগামী সপ্তাহে দেশটিতে সফরে যাবেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

সম্প্রতি বেইজিংয়ে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ এবং সম্প্রসারণ-বিরোধিতা নিয়ে একটি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়। যেখানে প্রথমবারের মতো অভিজাত পরমাণু ক্লাব এনএসজি (পরমাণু সরবরাহকারী সংস্থা)-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে চীনের সঙ্গে। এতোদিন ধরে এনএসজি প্রশ্নে নেতিবাচক ভূমিকা নেওয়া চীন নাকি কথা দিয়েছে যে, ভারতের দাবি খতিয়ে দেখবে তারা।

চীনের শীর্ষ কূটনীতিক স্টেট কাউন্সিলর ওয়াঙ্গ ই বলেন, আমাদের নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী এ বছর চীন-ভারত সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। এতে একটি ইতিবাচক গতিবেগ পরিলক্ষিত হয়েছে। সূত্র: রয়টার্স, আনন্দবাজার।