বেসরকারিকরণের ঝুঁকিতে তাজমহলসহ ভারতের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো

ভারত সরকার তাজমহলসহ ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো বেসরকারিকরণ করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির আন্দোলন কর্মীরা। সরকার একটি বিতর্কিত প্রকল্পের আওতায় অনেকগুলো স্থাপনা বিভিন্ন কোম্পানিকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে তারা এই অভিযোগ করছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

ভারতের তাজমহল

বিরোধী রাজনীতিকরা অভিযোগ করছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ‘‌অ্যাডোপ্ট এ হেরিটেজ’ পরিকল্পনার আওতায় ঐহিত্যগত স্থানগুলোকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দিচ্ছে। এর ফলে দেশের ৯৫টি ঐতিহাসিক স্থান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় চলে যাবে।

ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শনিবার ডালমিয়া ভারত নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৫ বছরের জন্য ২৫ কোটি রুপির চুক্তির কথা ঘোষণা করেছে। এ চুক্তির আওতায় ১৭ শতকের স্থাপনা দিল্লীর লাল কেল্লা ও অন্ধ্র প্রদেশের আরেকটি দুর্গের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে।

তাজমহল ও ১২ শতকের ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত ঐতিহাসিক স্থাপনা কুতুব মিনারসহ অন্যান্য স্থাপনাও বেসরকারি খাতে দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেছে সরকার। ইতোমধ্যে তাজমহল ইজারা নেওয়ার জন্য দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।

মুঘল সম্রাট শাহ জাহান ১৬৩৯ সালে লাল কেল্লা নির্মাণ করেন। ইউনেস্কো ঘোষিত ঐতিহ্যগত স্থাপনাটিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্য দিয়ে থাকেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চুক্তির আওতায় লাল কেল্লার উন্নয়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার দেওয়া হয়েছে। ডালমিয়া ভারতকে সরকারের তত্ত্বাবধানে থেকে কিছু বিজ্ঞাপন, টিকিটের মূল্য নির্ধারণ ও তা থেকে অর্থ উপার্জন করতে দেওয়া হবে।

সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, সব প্রক্রিয়ায় অবশ্যই স্থাপনার উন্নয়নের জন্য করা হবে। এই প্রকল্প থেকে কোম্পানিগুলোর লাভ করার সুযোগ থাকবে না।

দিল্লির লাল কেল্লা

তবে সমালোচকরা বলছেন, স্থাপনাগুলোর কার্যকর বেসরকারিকরণের জন্যই এই নিলামের আয়োজন করা হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেস এই প্রকল্পের নিন্দা জানিয়ে তার পরিবর্তে স্থাপনাগুলোর জন্য আরও সরকারি বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায় সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘এটাকে কেন ইজারা দিতে হবে? এটা আমাদের ইতিহাসের দুঃখজনক ও অন্ধকারময় দিন’।

দিল্লিভিত্তিক ঐতিহাসিক ও পুরাকীর্তি আন্দোলন কর্মী রানা সাফভি বলেন, কর্পোরেট ব্যবস্থাপনাকে কীভাবে নজরদারি করা হবে সেই বিষয়টি অস্পষ্ট। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’কে তিনি বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থাপনাগুলোর পেছনে কত অর্থ ব্যয় করবে সে বিষয়ে স্বচ্ছতা নেই। কিন্তু তারা টিকিট বিক্রি করে চুক্তির চেয়ে নিশ্চিতভাবে অনেক বেশি অর্থ আয় করবে। চুক্তির আওতায় কোম্পানিগুলো ঐতিহাসিক নির্দেশনাও প্রস্তুত করবে। 

তালিকায় থাকা অনেক স্থাপনাই তৎকালীন মুসলিম শাসকদের সময়কার। তাদের ইতিহাস নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপিসহ অনেক ডানপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তাদের অনেকেই দাবি করেন, তাজমহল একটি হিন্দু মন্দিরের ওপর স্থাপন করা হয়েছে।

সাফভি বলেন, আমরা নিশ্চিত নই কোম্পানিগুলো তাদের অডিও-ভিডিও নির্দেশিকায় কোন ঐতিহাসিক সূত্র ব্যবহার করবে।

ভারতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত ৩১টি স্থাপনাসহ মোট ৩৭০০ ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল টুইটারে লিখেছেন,  ‘বড় ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো জাতির মুকুটের রত্ন। এসব নিয়ে খেলা করা উচিত নয়’।