যুক্তরাজ্যের উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারিতে ঝুঁকিতে বাংলাদেশি অভিবাসীরা

১৯৪০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেওয়া অভিবাসীদের (উইন্ডরাশ জেনারেশন) অনেকেই দেশটিতে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের অভিবাসন নীতির কারণে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব। সম্প্রতি এমন অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন সদ্যবিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড। ওই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছরে ১০ শতাংশের বেশি অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাজ্য থেকে বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এটি ফাঁস হওয়ার জেরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৯ এপ্রিল রাতে পদত্যাগে বাধ্য হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অভিবাসী পরিবারের সন্তান সাজিদ জাভিদ। অবৈধ অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিষয়টি পরিচিতি পায় ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’ নামে। ১৯৭৩ সালের আগে কমনওয়েলথ নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেওয়া অনেকেও এ উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন।

noname

উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারিতে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রায় হাজার হাজার জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত বাসিন্দা দেশটিতে বসবাস ও কাজের অধিকারের ব্যাপারে প্রামাণ্য নথির অভাবে বলপূর্বক নির্বাসনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। কেননা ১৯৭৩ সালের আগে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেওয়া এসব অভিবাসীরা নতুন কঠোর অভিবাসী আইনের আগে দেশটিতে পাড়ি দেন। ওই আইনে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্যও যুক্তরাজ্যের অভিবাসী হয়ে আসার বিষয়টি কঠিন করা হয়।

এদিকে দায়িত্ব নেওয়ার পরই যুক্তরাজ্যের অভিবাসী বিতর্ক সমাধানের চেষ্টার আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির ইতিহাসের প্রথম মুসলিম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। শুধু প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূতই নয়, এই প্রথম কোনও মুসলিম ব্রিটেনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত এই ব্রিটিশ মন্ত্রী অভিবাসীদের মর্যাদা ও তাদের সঙ্গে আচরণের বিষয়টি নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন।

কেলেঙ্কারির ঘটনায় দেখা যায়, কমনওয়েলথভুক্ত ক্যারিবিয়ান দেশ জ্যামাইকা থেকে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্বের দলিল না থাকায় খারাপ আচরণ করা হচ্ছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর সাজিদ জাভিদ বলেন, ‘সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো ক্যারিবিয়ান থেকে আসা উইন্ডরাশ প্রজন্মের ব্রিটিশ নাগরিকদের সাহায্য করা। তাদের সঙ্গে যাতে শিষ্টাচার ও সততার সঙ্গে আচরণ করা হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। কারণ সেটাই তাদের প্রাপ্য। মানুষ কী দেখতে চায় আমি তাই চিন্তা করছি।’

বিতর্কের কেন্দ্রে ক্যারিবিয়ান দেশ জ্যামাইকার নাম থাকলেও কমনওয়েলথভুক্ত অন্যান্য দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। নাগরিকত্বের দলিল না থাকায় বিপাকে পড়তে পারেন বাংলাদেশসহ দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো ব্যক্তিরা। এ প্রসঙ্গে নবনিযুক্ত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেন, ‘যখন উইন্ডরাশ বিষয়টি শুনি আমি ভেবেছি, এটা আমার মা হতে পারতেন, আমর বাবা হতে পারতেন, আমার চাচার সঙ্গে বা আমার সঙ্গেও এমনটা হতে পারতো।’

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিভিত্তিক ব্রিটিশ অভিবাসন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে বসবাসকারী প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ ১৯৭০ সাল বা তারও আগে থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন; যাদের ব্রিটিশ জাতীয়তার নথি নেই।

এই ৫৭ হাজার অভিবাসীর মধ্যে ১৫ হাজার জ্যামাইকা থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে ১৩ হাজার ভারত এবং বাকি ২৯ হাজার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে গিয়ে স্থায়ী হন।