ভারতের মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদ শহরে শুক্রবার রাতে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গায় দুইজন নিহত হয়েছেন। ১১ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন আরও অনেকে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে শখানেক দোকানপাট এবং বহুসংখ্যক যানবাহন। আটক করা হয়েছে ৪১ জনকে।
আওরঙ্গাবাদের কেন্দ্রস্থলে শাহগঞ্জ আর কাছাকাছি মোতি করঞ্জা, রাজা বাজার, নবাবপুরা, গান্ধীনগর; এসব এলাকায় হিন্দু আর মুসলমানদের মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যে থেকেই সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় সারা রাত দোকান আর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ চালাতে থাকে দাঙ্গাকারীরা। সঙ্গে চলতে থাকে পাথর ছুঁড়ে তাণ্ডব।
পুলিশ কমিশনার মিলিন্দ ভারাম্বে বিবিসিকে বলছেন, সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তেই বাহিনী গিয়ে ওই সব অঞ্চলে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও প্লাস্টিক গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে রাতেই। তবে শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার থেকে আবারও পাথর ছুঁড়তে শুরু করে একদল যুবক। তাদের এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। তবে তারা বাইরে থেকেও এসে থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
যেভাবে সংঘর্ষের সূত্রপাত
এই পুরো অশান্তির সূত্রপাত পানির সংযোগ নিয়ে। বিল বকেয়া থাকায় কর্পোরেশন থেকে বিভিন্ন এলাকায় লাইন কাটা হচ্ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় কয়েকটি মুসলিম বাড়িতেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গান্ধীনগর এলাকার দুই সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা পানি নিতে এলে তাদের মধ্যে বচসা, হাতাহাতি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
ওই এলাকাগুলিতে হিন্দু আর মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই বসবাস। আর দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ ছিল। পুলিশ এর আগেও হিন্দু ও মুসলিম; উভয় পক্ষের নেতাদের ডেকে বিরোধ মেটানোর পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় পানির লাইন কাটার পরে তা আগুনের ফুলকিতে রূপ নেয়। শুরু হয়ে যায় পাথর ছোঁড়া আর অগ্নিসংযোগ। গুজব রটতে থাকে শহরজুড়ে। গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
পুলিশ কমিশনার বলছেন, উপদ্রুত এলাকায় বাড়তি বাহিনী আনা হয়েছে। দাঙ্গাকবলিত এলাকাগুলোতে টহল চলছে। সকালের পরে নতুন করে কোথাও অশান্তি ছড়ায়নি। তবে উত্তেজনা এখনও রয়েছে।
নিহতরা হচ্ছেন ৬২ বছরের জাগানলাল বনসালি এবং ১৭ বছরের আবদুল হালিম হারুন কাদরি। এদের মধ্যে জাগানলাল বনসালি শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি একটি দোকানের ভেতরে ছিলেন রাতে। সেই দোকানে আগুন লাগার পরে তিনি আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। অন্যজন একটি চায়ের দোকান চালান।
প্রাচীন অজন্তা-ইলোরা গুহামালার সবচেয়ে কাছের শহর এই আওরঙ্গাবাদ। শহরের কাছেই রয়েছে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, বিবিসি বাংলা।