আরও দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যা ইসরায়েলের, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব

জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনকে কেন্দ্র করে সোমবারের ইসরায়েলি বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর মঙ্গলবারও রক্ত ঝরেছে গাজা উপত্যকায়। এদিন আরও দুই ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে দখলদার সেনারা। সোমবার নিহত ৬০ ফিলিস্তিনির দাফনের দিনে সীমান্ত বেষ্টনীর কাছে তাদের হত্যা করা হয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, এরইমধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে দেশের পথে যাত্রা করেছেন। অন্যদিকে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান।

হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। আর ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করে এরদোয়ান বলেছেন, মুসলমানরা কখনও জেরুজালেমকে নিজেদের হাতছাড়া হতে দেবে না।

মঙ্গলবার ছিল ফিলিস্তিনিদের ভূমি দিবসের কর্মসূচির শেষ দিন। এই দিনটিকে তারা ‘নাকবা’ বা বিপর্যয় দিবস হিসেবে পালন করেন। গ্রেট রিটার্ন অব মার্চ খ্যাত এবারের কর্মসূচিতে বুধবার পর্যন্ত নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১৬ ফিলিস্তিনি। মঙ্গলবার গাজার বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই সোমবারের হত্যাযজ্ঞে নিহতদের জানাজা ও দাফনে অংশ নেন। ইসরায়েল সীমান্তে বিক্ষোভে অংশ নেন তারা। আর মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে গুলি ছোড়ে দখলদার বাহিনী। হতাহত হন অনেকে।

সোমবার নিহতদের জানাজায় অংশ নেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে গাজা উপত্যকার রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। হত্যাকাণ্ডের বদলা নেওয়ার শপথ নেন তারা। স্লোগান তোলেন, ‘আমরা মন-প্রাণ দিয়ে শহীদদের রক্তের বদলা নেব।’

ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের শিকার ৬২ জনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ৮ মাসের শিশু লিলা আল ঘানদৌর। মঙ্গলবার তার মরদেহ ফিলিস্তিনি পতাকায় মুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন শত শত ফিলিস্তিনি। শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার মা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘তাকে আমার সঙ্গে থাকতে দাও। তার এখনও যাওয়ার সময় হয়নি।’

গাজার হাসপাতালগুলোতে এখন আহত ফিলিস্তিনিদের উপচেপড়া ভিড়। অনেকে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। গুলিবিদ্ধ বাসেম ইব্রাহিম বলেন, দেরির কারণে এক পর্যায়ে আমি পা হারানোর ভয় করছিলাম।

তিনি বলেন, এখানে চিকিৎসক অনেক কম। তারা আহত সবাইকে দেখতে পারছেন না। আহতদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও জানা যায়নি।

আহতদের চিকিৎসায় পশ্চিম তীর থেকে গাজা উপত্যকায় আসতে চেয়েছিল ফিলিস্তিন সরকারের মেডিক্যাল টিম। তবে হাসপাতালগুলোর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও তাদের গাজায় প্রবেশ করতে দেয়নি দখলদার বাহিনী।

বিক্ষোভকারীদের সীমান্ত অতিক্রম ঠেকাতে স্ন্যাপশ্যুটার মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। এছাড়া মোতায়েন করেছে ট্যাংকসহ ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সেনাসদস্যদের।

উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল। ১৯৭৬ সালের ৩০ মার্চ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ইহুদি বসতি নির্মাণের প্রতিবাদ করায় ছয় ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। পরের বছর থেকেই ৩০ মার্চ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ছয় সপ্তাহকে ভূমি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। সূত্র: হারেৎজ, রয়টার্স, আনাদোলু এজেন্সি।