ইরানকে ঠেকানোর নতুন পরিকল্পনার কথা জানালেন পম্পেও

ইরানের ওপর ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। পরমাণু চুক্তি বের হয়ে যাওয়ার পর সোমবার ওয়াশিংটনে এক ভাষণে তিনি ইরানকে ১২ টি শর্ত বেঁধে দিয়ে এই হুঁশিয়ারি দেন। পম্পেও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার পর নিজেদের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখতে হিমশিম খাবে ইরান।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও

২০১৫ সালের জুনে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬ জাতিগোষ্ঠীর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গত ৮ মে ইরানের বিরুদ্ধে সমঝোতা ক্ষুণ্নের অভিযোগ তুলে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জয়েন্ট কমপ্রিহেন্সিভ প্লান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চুক্তি কার্যকর রাখতে প্রতি তিন মাস পরপর দেশটির প্রেসিডেন্টের সম্মতি দরকার। ১২ মে পরবর্তী তিন মাসের জন্য এই চুক্তিতে ট্রাম্প স্বাক্ষর না করায় যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে সমঝোতা ভেস্তে গেছে।

সোমবার ইরানকে রুখতে মার্কিন পরিকল্পনা ঘোষণা সময়ে পম্পেও বলেন ইরানের ‘আগ্রাসন’ রুখতে পেন্টাগন ও আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে। সোমবার তিনি ইরানকে ১২টি শর্ত বেঁধে দেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সিরিয়া থেকে সব সেনা প্রত্যাহার ও ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের অর্থায়ন বন্ধ করা। এছাড়া আন্তর্জাতিক আণবিক বিদ্যুৎ সংস্থাকে তাদের পারমাণবিক পরীক্ষার বিস্তারিত জানানো ও এই পরীক্ষা বন্ধ করা, প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি হুমকিস্বরুপ আচরণ বন্ধ করতে হবে। ইসরালকে ধ্বংস করা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে মিসাইল হামলার হুমকি বন্ধ করা এবং আটক মার্কিন নাগরিকদের মুক্তি দেওয়ার শর্তও দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

পম্পেও বলেন, ইরান যেন কখনওই পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত না করতে পারে তা নিশ্চিত করবে যুক্তরাষ্ট্র। পম্পেও জানান সব শর্ত মেনে নিয়ে যদি ইরান আলোচনার টেবিলে ফিরে চাহিদা পূরণ করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। বহার করা হবে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এমনকি ইরানের আধুনিকায়নেও পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়।
তিনি বলেন, আমেরিকা আশা করে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ বয়ে বেড়ানো ইরানি জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আমাদের শ্রম ফল বয়ে আনবে। পম্পেও জানান নতুন পরিকল্পনা ইউরোপের অর্থনৈতিক জটিলতা বাড়াবে। একই সঙ্গে তিনি যে সমস্ত কোম্পানি ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রাখবে তাদের সতর্ক করে দেন। পম্পেও বলেন, ‘আমি জানি আমাদের ইউরোপীয় মিত্ররা তেহরানের পুরনো পারমাণবিক চুক্তি বহাল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে। তা করা তাদের সিদ্ধান্ত। তার জানে আমাদের অবস্থান কোথায়।’ গত কয়েকদিনে কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের নেতারা এই চুক্তি বহাল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপ এবং এশিয়ার দেশগুলোর সহায়তা দরকার। কারণ এসব দেশের সঙ্গেই ইরানের বাণিজ্য সম্পর্ক বেশি। এসব দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্য অপেক্ষাকৃত কম।