যুক্তরাষ্ট্রের ‘শত্রুতা’কে টম অ্যান্ড জেরি কার্টুনের সঙ্গে তুলনা খামেনির

ইরানকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে যুক্তরাষ্ট্র বার বার ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে এ ব্যর্থতাকে ‘টম অ্যান্ড জেরি কার্টুনের’ বিড়াল চরিত্র টমের সঙ্গে তুলনা করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনি। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (২৩ মে) সন্ধ্যায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে খামেনি এসব মন্তব্য করেন।

ইরানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন খামেনি
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সের কাছে ইউরেনিয়াম প্রকল্প সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। পূর্বসূরি ওবামার আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে ১২ মে তা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

বুধবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘ইরান বিপ্লবের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এ দেশটিকে আক্রমণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের বৈরিতা দেখিয়েছে। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটানোর জন্য এসব কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছিল। ৪০ বছর আগের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে আপনারা এখনকার ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে তুলনা করতে পারেন। দেখবেন, এটি নানারকমের সক্ষমতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে-যেমনটা টম অ্যান্ড জেরি কার্টুনের বিখ্যাত বিড়ালের ক্ষেত্রে (ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়া) হয়ে থাকে।’

উল্লেখ্য, টম হল নীলাভ-ছাই রঙের পোষা বিড়াল, আর জেরি হল বাদামী রঙের ছোট এক ইঁদুর যার বাড়ি টমের খুব কাছেই। টম খুব অল্পতেই রেগে যাওয়া স্বভাবের হলেও জেরি খুব স্বাধীন আর সুযোগসন্ধানী। টমের সাথে জেরির মানসিকতার কোনই মিল নেই। প্রতিটি কার্টুনে সাধারণত জেরিকে বিজয়ীর বেশে দেখা যায় আর টমকে বিফল।

পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা নিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বুধবার আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্টের পরিণতি বুশ ও রিগ্যানের মতো পূর্বসূরিদের চেয়ে ভালো কিছু হবে না এবং তিনিও তাদের মতোই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জয়েন্ট কমপ্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চুক্তি কার্যকর রাখতে প্রতি প্রতি তিন মাস পরপর দেশটির প্রেসিডেন্টের সম্মতি দরকার। ১২ মে পরবর্তী তিন মাসের জন্য এই চুক্তিতে ট্রাম্প স্বাক্ষর না করায় যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে সমঝোতা ভেস্তে যায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে আসলেও চুক্তি বহাল রাখার ঘোষণা দেয় বাকি দেশগুলো।

বুধবার (২৩ মে) চুক্তিভুক্ত তিন ইউরোপীয় দেশকে (ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি) কয়েকটি শর্ত বেঁধে দেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। সর্বোচ্চ নেতা তার শর্তের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন,যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থেকে ইরানের তেল বিক্রিজনিত কার্যক্রমকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে অবশ্যই তেল কেনা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশগুলোকে অঙ্গীকার করতে হবে যে তারা ইরানের ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং মধ্যপ্রাচ্যজনিত কমৃসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনায় যাবে না।