ট্রাম্প-কিম বৈঠকস্থলটি যেমন

আগামী ১২ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের বৈঠকটি সিঙ্গাপুরের কোন শহরে হচ্ছে মঙ্গলবার তা জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। সিঙ্গাপুরের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ সেন্টোসা কেমন তা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আগে সোমবার অনুষ্ঠানের সময়সূচি জানিয়েছিল হোয়াইট হাউস।

_101895797_4b87b12d-2cf4-47c0-92cf-1f61862ea31f

পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী ১২ জুন সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প ও কিমের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়ার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে উত্তর কোরিয়া। এ ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়াসহ ট্রাম্প-কিম বৈঠকের ব্যাপারেও অনিশ্চয়তা সৃষ্টির কথা বলা হয়। ২৪ মে উনের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। একদিন পর ২৫ মে ট্রাম্প ১২ জুন তারিখেই সিঙ্গাপুরে কিমের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে বলে নতুন করে ইঙ্গিত দেন। ২৭ মে সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনও বৈঠকের খবর নিশ্চিত করে।

এরপর থেকেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো কোথায় এবং কখন এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স নিশ্চিত করেন যে ১২ জুন স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আর সর্বশেষ মঙ্গলবার জানা গেল বৈঠকস্থল। বহুল প্রত্যাশিত বৈঠকটি সিঙ্গাপুরের সেন্টোসা দ্বীপের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে।

_101895798_59d3d3f2-a592-431d-af92-56a1a00d1413

সিঙ্গাপুর দেশটি যে ৬৩টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে সেন্টোসা দ্বীপ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই দ্বীপটি ৫০০ হেক্টর জায়গার উপর গড়ে উঠেছে। মূল ভূখণ্ডের কাছে এই এ দ্বীপটিতে প্রচুর বিলাসবহুল হোটেল এবং অভিজাত গলফ কোর্স রয়েছে। তবে সেন্টোসা দ্বীপের একটি অন্যরকম ইতিহাস রয়েছে। দস্যুতা, রক্তপাত এবং যুদ্ধের ঘটনা ঘিরে রয়েছে এ দ্বীপের ইতিহাস।

উনিশ শতকে ব্রিটেনের অধীনস্থ একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে সিঙ্গাপুরের আবির্ভাব। ভারত এবং চীনের মধ্যে যে সমুদ্র পথ আছে সেটির মাঝখানে দেশটির অবস্থান। তাই সিঙ্গাপুরের আলাদা একটি গুরুত্ব রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনের পূর্বেই সিঙ্গাপুর একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছিল। ব্যবসায়ীদের আসা-যাওয়া বেশি থাকায় দস্যুদের আনাগোনাও ছিল বেশি।

দস্যুদের জন্য সেন্টোসা দ্বীপটি এতটাই পরিচিত ছিলো যে একটা সময় এর নাম হয়ে যায় 'মৃত্যুর দ্বীপ'। তবে ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের আত্নসমর্পনের পর সিঙ্গাপুর জাপানের হাতে চলে যায়। তখন জাপানিরা এ দ্বীপটিকে 'সায়োনান' অর্থাৎ 'দক্ষিণের বাতি' নামে নতুন নামকরণ করে।

_101897090_fec8cec7-5abd-4cc2-b45c-686fc496ddf3

সে দ্বীপে নৃ-তাত্ত্বিক চীনা সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। জাপান-বিরোধীদের সেখান থেকে সরানোর নামে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী চীনা পুরুষদের বিভিন্ন জায়গায় ডেকে নিয়ে মেশিনগান দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে সাগরে ফেলে দেয়া হয়।

যেসব জায়গায় হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল তার মধ্যে বর্তমানে কাপেল্লা হোটেলের সামনে সমুদ্র সৈকত অন্যতম।

_101897092_b4ace0e1-a898-459d-b7d3-d98e3891ce5c

এরপর ১৯৭০ সালে সিঙ্গাপুর সরকার দ্বীপটির নামকরণ করে সেন্টোসা , যার অর্থ 'শান্তি'। দ্বীপটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়। গড়ে উঠে অনেক ব্যয়বহুল আবাসন প্রকল্প। এখানে একেকটি বাড়ির দাম কয়েক মিলিয়ন ডলার। সে সাথে রয়েছে বিলাসবহুল, গলফ কোর্স এবং নানা ধরনের অভিজাত রেস্টুরেন্ট।

আগে মৃত্যুকূপ নামে পরিচিত থাকলেও মূল ভূখণ্ডের কাছ হওয়ায় সেন্টোসা দ্বীপ বেশ নিরাপদ। এ দ্বীপে যাওয়ার জন্য যেসব প্রবেশ পথ আছে সেগুলোকে খুব সহজেই নিরাপদ রাখা যায়। সেখানে যাওয়ার জন্য একটি ক্যাবল কার লাইন, একটি মনোরেইল লাইন এবং যানবাহন চলাচলের একটি টানেল রয়েছে।

সৌজন্য: বিবিসি বাংলা