কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনে কাশ্মির, জোরালো হচ্ছে জঙ্গিবিরোধী অভিযান

মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির পদত্যাগের পর বুধবার জম্মু-কাশ্মিরে কেন্দ্রীয় শাসন জারি হয়েছে। সে দেশের সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ গভর্নরের পাঠানো সুপারিশ অনুযায়ী অশান্ত ওই উপত্যকায় কেন্দ্রীয় শাসন জারির নির্দেশ দেন। এ নিয়ে ১৯৭৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরে অষ্টমবারের মতো কেন্দ্রীয় শাসন জারি হলো। কেন্দ্রীয় শাসন জারির প্রথম দিনেই নিরাপত্তা ইস্যুকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানিয়ে দুপুরে এক বৈঠক ডেকেছেন গভর্নর এনএন ভোহরা। নিরাপত্তা বৈঠকের পর জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরালো হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে এনডিটিভি।

জম্মু ও কাশ্মিরের গভর্নর এন এন ভোহরা 

জম্মু-কাশ্মিরে পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-পিডিপি ও ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যকার জোট ভেঙে যাওয়ার পর রাজ্যতে পরবর্তীতে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। বিজেপি জোট সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার ধারাবাহিকতায় মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়েন পিডিপি নেতা মেহবুবা মুফতি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসন পাওয়ার দিক থেকে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেস মেহবুবার দলের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়। নতুন জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনার অনুপস্থিতিতে সেখানে গভর্নরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় শাসন জারি হলো।

এনডিটিভি জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্যপাল এনএন ভোহরা রাজ্যটিতে কেন্দ্রীয় শাসন জারির জন্য প্রেসিডেন্ট কোবিন্দের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন, যার একটি কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছিল। ২০০৮ সাল থেকেই জম্মু ও কাশ্মিরের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছেন ভোহরা। তাকেই এই সংকট উত্তরণে সবচেয়ে অভিজ্ঞ বলে মনে করা হচ্ছে। তার ১০ বছর সময়কালে তিনবার গভর্নরের শাসন ব্যবস্থা আরোপ করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার সময় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন গভর্নর। এই মুহূর্তে নিরাপত্তাই তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারও প্রদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে। আগামী কয়েক দিনে কাশ্মিরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আরও জোরালো হতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংও সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন রমজান উপলক্ষে চলা অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে না। রাজ্যের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা এসপি ভায়েদ বলেন, ‘অভিযান চলবে। শুধুমাত্র অস্ত্রবিরতির সময় আমরা অভিযান চালাইনি। সন্ত্রাসীরা ঠিকই হামলা চালিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে অভিযান জোরালো হবে আরও। আর এবার কাজ করা আরও সহজ হবে।’
রমজানে মেহবুবা মুফতির দেওয়া অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবকে শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তবে রাজনাথ সিংয়ের দাবি, এতে পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠী হামলা চালানোর সুযোগ পেয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার তাই অস্ত্রবিরতি বাড়াতে চায়নি। অস্ত্রবিরতি চলাকালীন অবস্থাতেই সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন দ্য রাইজিং কাশ্মির পত্রিকার সম্পাদক সুজাত বুখারি। সেই হামলার কারণেই অস্ত্রবিরতি ভঙ্গ করা হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের।
গত তিন বছর ধরে কাশ্মিরে বিজেপি-পিডিপি জোট সরকারের শাসন চলছে। তবে বুরহান ওয়ানির হত্যা, কাঠুয়ায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর অনেক বিষয় নিয়েই জোটের দুই দলের মতবিভেদ চলছিল।