শীর্ষ নেতার মৃত্যু নিশ্চিত করলো পাকিস্তান তালেবান, নতুন নেতা ওয়ালি মেহসুদ

গত সপ্তাহে মার্কিন ড্রোন হামলায় পাকিস্তান তালেবানের প্রধান মাওলানা ফজলুল্লাহর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে নতুন নেতা নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে টিটিপি নামে পরিচিত সশস্ত্র গ্রুপটি। শনিবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মুখপাত্র মোহাম্মদ খোরাসানি জানিয়েছেন নতুন নেতা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন নুর ওয়ালি মেহসুদ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের মেহসুদ উপজাতিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়ায় অভ্যন্তরীণ বিরোধ কমানোতে ভূমিকা রাখতে পারবেন নতুন টিটিপি নেতা। পাকিস্তান তালেবানের নিহত শীর্ষ নেতা মাওলানা ফজলুল্লাহ
ধারণা করা হয় নিহত ফজলুল্লাহ ২০১২ সালে শিক্ষা অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাইয়ের ওপর হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী মালালা পরিণত হয়েছেন মেয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার অধিকারের বৈশ্বিক প্রতীক। মালালার ওপর হামলার নির্দেশ ছাড়াও ফজলুল্লাহর নেতৃত্বাধীন টিটিপি ২০১৪ সালে পেশোয়ারের এক স্কুলে হামলায়  শতাধিক শিক্ষার্থীসহ দেড়শোরও বেশি নাগরিক হত্যায় দায়ী।

গত ১৪ জুন পাকিস্তান সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কুনার প্রদেশে ফজলুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে তাদের ভাষায় সন্ত্রাসবিরোধী ড্রোন হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। মার্কিন কর্তৃপক্ষ ওই হামলায় সফলতার দাবি না করলেও আফগানিস্তানের মার্কিন সমর্থনপুষ্ট প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি পাকিস্তানি নেতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে। আফগান সেনাপ্রধানও এক টেলিফোন বার্তায় ওই খবর নিশ্চিত করেন।

শনিবার এফপিকে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিটিপির মুখপাত্র মোহাম্মদ খোরাসানি মার্কিন ড্রোন হামলায় ফজলুল্লাহর নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেন। দুই সহযোগিসহ ফজলুল্লাহর খবর নিশ্চিত করে খোরাসানি ওই বিবৃতিতে বলেন, ‘অবিশ্বাসীদের হামলায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের নেতারা শহীদ হওয়া গর্বের বিষয়।’

বিবৃতিতে জানানো হয় গ্রুপটির শীর্ষ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সুরা কাউন্সিল মুফতি নুর ওয়ালি মেহসুদকে ফজলুল্লাহর স্থলাভিষিক্ত করেছে। তার ডেপুটি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে মুফতি মাজাহিমকে। মাজাহিম মুফতিদ হাফজা উল্লাহ নামেও পরিচিত বলে জানান টিটিপির মুখপাত্র।

দীর্ঘদিন ধরে এক সময়ের মিত্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আফগান তালেবানদের সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ৯/১১ হামলার প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তানে শুরু করা হামলার মিত্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আফগান তালেবান নেতাদের নিরাপদ স্বর্গ দেওয়ার অভিযোগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি তালেবানদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে থাকে।

ফজলুল্লাহর মৃত্যুর খবরকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে বর্ণনা করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ২০০৯ সাল থেকে সশস্ত্র নেতা ফজলুল্লাহ আফগানিস্তানে লুকিয়ে ছিল আর তার মৃত্যুর খবর টিটিপির হামলায় স্বজন হারানো পরিবারগুলোকে শান্তি দেবে।

নতুন নিয়োগ পাওয়া ৪০ বছর বয়সী চিন্তাবিদ মুফতি নুর ওয়ালি মেহসুদ এক সশস্ত্র যোদ্ধাও। জাতিগভাবে তিনি দক্ষিণ ওয়ারিজিস্তানের মেহসুদ উপজাতিভুক্ত। পাকিস্তান তালেবানের প্রধান হওয়ার আগে গ্রুপটির প্রধান বিচারক ছিলেন তিনি। গত বছর নিজের প্রকাশিত এক বইয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে ২০০৭ সালে হত্যার পরিকল্পনার বিস্তারিত জানান এই তালেবান নেতা।

মেহসুদ তার বইতে লিখেছেন ৯/১১ হামলার পর মার্কিন হামলা শুরুর পর তাদের বিরুদ্ধে লড়তে আফগানিস্তানের কাবুলে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে তালেবানের পতনের পর গভীর দুঃখ পান বলেও নিজের বইতে লিখেছেন তিনি। এছাড়া ১৯৯০ এর দশকে মুজাহিদিনদের পক্ষে  আফগানিস্তানে পূর্বাঞ্চলীয় জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন নুর ওয়ালি। টিটিপির প্রতিষ্ঠাতা বায়তুল্লাহ মেহসুদের সহকারি হিসেবেও কাজ করেছেন এই সশস্ত্র নেতা। দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে ২০০৯ সালে এক মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন বায়তুল্লাহ মেহসুদ।

ফয়সালাবাদ, গুজরানওয়ালা, করাচিসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে পড়ালেখা করেছেন মুফতি নুর ওয়ালি। আবু মনসুর অসীম নামেও পরিচিত তিনি।

পাকিস্তানের প্রথিতযশা সাংবাদিক ও তালেবান বিশেষজ্ঞ রহিমুল্লাহ ইউসুফজাই এএফপিকে বলেছেন, মুফতি নুর ওয়ালি মেহসুদের নিয়োগের মাধ্যমে টিটিপির নেতৃত্ব নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের মেহসুদ উপজাতিদের কাছে ফিরে গেল। ফজলুল্লাহ সোয়াত উপত্যকার বাসিন্দা ছিলেন বলেও জানান তিনি।

ইউসুফজাই বলেন, ২০০৯ সালে ফজলুল্লাহ আফগানিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার পর টিটিপির মধ্যে শুরু হওয়া বিরোধ নিরসনে মেহসুদের নেতৃত্ব ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।