যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিটমন্ত্রীর পদত্যাগ, নতুন মন্ত্রী ডোমিনিক রাব

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া নিশ্চিতের দায়িত্ব পালনকারী ব্রেক্সিট মন্ত্রী দেহিদ ডেভিস পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন সে বিষয়ে তার আস্থা নেই। তিনি আর ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি নন। দেশটির সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, পদত্যাগের সিদ্ধান্তটিকে দেহিদ ডেভিস ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে ব্রেক্সিটের বিষয়ে তার ধারণা উল্লেখ করতে ছাড়েননি এক সময় ব্রেক্সিটের পক্ষে সবচেয়ে সোচ্চার কণ্ঠস্বরগুলোর একটি দেহিদ ডেভিস। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য ইইউকে খুব সহজেই অনেক কিছু দিয়ে দিচ্ছে।’ পদত্যাগের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, তিনি ডেভিসের সঙ্গে একমত নন। কিন্তু ডেভিস এতদিন ব্রেক্সিটের জন্য যে কাজ করেছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মে। ডেভিস জানিয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী মের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হতে চান না। এখন নেতৃত্বের দখলের প্রতিযোগিতার সময় নয়। ব্রেক্সিট বিষয়ক নতুন মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডোমিনিক রাবকে। ব্রেক্সিটমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি গৃহায়ন ও স্থানীয় সরকার বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন।skynews-david-davis-brexit_4264555

বিবিসি লিখেছে, ডেভিড ডেভিসের পদত্যাগ থেরেসা মের জন্য অনেক বড় একটা ধাক্কা। মে এমনিতেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিষয়ে রক্ষণশীল চিন্তার অধিকারী এমপিদের পাশে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এরকম পরিস্থিতিতে ডেভিড ডেভিসের মতো সঙ্গী পদত্যাগ করলেন। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা। ২০১৬ সালের গণভোট অনুযায়ী যুক্তরাজ্য এখন ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

ব্যবস্থাটি চূড়ান্ত করার নিয়ে অনেক বিষয়ে সমঝোতার বিষয় রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাণিজ্য নীতি প্রণয়ন করা। ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন হয়ে গেলে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভেতর বাণিজ্যিক সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বাণিজ্যিক সুবিধা নিশ্চিতের জন্য যুক্তরাজ্য ইইউ অঞ্চলে মানুষের চালাচল ও ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেবে কি না তা নিয়ে থেরেসা মের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেই বিরোধ রয়েছে।

থেরেসা মের কনজারভেটিভ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ‘ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির’ ১০ সংসদ সদস্যের সমর্থনে। ব্রেক্সিট নিয়ে যদি থেরেসা মে সবার সমর্থন না পান তাহলে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে তার পরিকল্পনা ভেস্তে তো যাবেই সেই সঙ্গে তার প্রধানমন্ত্রীত্ব প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা পদত্যাগপত্রে ডেভিড ডেভিস লিখেছেন, ‘যুক্তরাজ্য এখন যে নীতি ও কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে না, যুক্তরাজ্য আদৌ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বের হতে পারবে। যুক্তরাজ্যে যেভাবে আগাচ্ছে তাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নতুন ছাড়ের আবদার আসাটা প্রায় নিশ্চিত। এমনভাবে দর কষাকষি চলতে থাকলে ব্রেক্সিট ত্যাগের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে হওয়া আলোচনায় আমরা দুর্বল পক্ষ হয়ে যাব।’ ডেভিসের মন্তব্যের বিরুদ্ধে থেরেসা মে বলেছেন, শুক্রবারের সভায় যেসব নীতির বিষয়ে তিনি একমত হয়েছিলেন সেসব নীতিকে এখন যে ভাষায় ডেভিস বর্ণনা করছেন তার সঙ্গে তিনি একমত নন।

কিন্তু বিবিসি রেডিও ফোরকে ডেভিস বলেছেন, থেরেসা মে মের পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি আগেই আপত্তি জানিয়েছেন। মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের তিনি বলেছেন, তিনি এখানে ‘ভুল মানুষ।’ এর আগে থেরেসা মের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন স্টিভ বেকার। তাকে গত বছর ব্রেক্সিট বিষয়ক পার্লামেন্টারই আন্ডার সেক্রেটারি করা হয়েছিল। ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির এমপি পিটার বুন ডেভিসের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘তার সিদ্ধান্ত নীতিনিষ্ঠ এবং সাহসী।’ ব্রিটিশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান আয়ান ল্যাভেরি বলেছেন, ‘এটা পুরোপুরি বিশৃঙ্খল অবস্থা। থেরেসা মের আসলে আর কোনও বৈধতা নেই।’