বর্ণবাদের অভিযোগে উবার কর্মকর্তার পদত্যাগ

স্মার্টফোন অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা উবারের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগের মুখে পদত্যাগ করলেন প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগের প্রধান লিয়ান হর্নসি। বারবার বর্ণবাদের অভিযোগ উঠার পর তদন্ত হয় যে, এইচআর প্রধান আসলে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করছেন। সেই তদন্তের ১৮ মাসের মাথায় পদত্যাগ করলেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাদ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

uber-trinidadপ্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন লিয়ান। বেনামে তথ্য ফাঁসকারী কয়েকজন অভিযোগ করেন, তিনি কৌশলে অভ্যন্তরীণ বর্ণবাদের অভিযোগ আড়াল করেছিলেন।

উবারের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান ছিলেন হর্নসি। অনেকদিন ধরেই বর্ণবাদ ইস্যুতে সংস্থাটির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। তার দায়িত্ব পালনকালে গত ১৮ মাসে যৌন নিপীড়ন, লিঙ্গ বৈষম্য ও বর্ণবাদ নিয়ে প্রচুর অভিযোগ এসেছে।

গত বছর আগস্টে দারা খশরুশাহী সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশ্ন উঠে উবারের এই নেতিবাচক ও ‘বিষাক্ত’ সংস্কৃতি থেকে মুক্ত করতে তিনি পদক্ষেপ নেবেন। বেশ কয়েকটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে এর আগে উবার প্রতিষ্ঠাতা ট্রাভিস কালানিককে দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছিল।

খশরুশাহী অবশ্য হর্নসির প্রশংসা করে বলেন, তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। তার পদত্যাগের কোনও কারণ জানাননি প্রধান নির্বাহী। তবে বিষয়টি অনেকদিন ধরেই তার মাথায় ছিল বলে দাবি করেন তিনি।

এই তদন্ত কিংবা পদত্যাগ নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি হর্নসি। গার্ডিয়ান তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।

‘উবার এমপ্লয়িজ অব কালার’ নামে একটি গোষ্ঠীর অভিযোগ, উবারের বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক প্রধান বার্নার্ড কোলম্যানের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করেছিলেন হর্নসি। এছাড়া সাবেক নির্বাহী বোজোমা সেইন্ট জনকেও হুমকি দিয়েছিলেন।

গত জুনে বেজোমা সেইন্ট উবার থেকে পদত্যাগ করেন। তার এই চলে যাওয়ার পেছনে হর্নসিকেই দায়ী করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি সেইন্ট জন ও কোলম্যান। ২০১৭ সালে অ্যাপল থেকে উবারে যোগ দেন জন। একবছর পরেই আবার ছেড়ে দেন। আর কোলম্যান হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনি প্রচারণায় কাজ করতেন। সেটি শেষ হওয়ার পর উবারে যোগ দেন তিনি।

আইনি প্রতিষ্ঠান গিবসন ডান এই তদন্তকাজ চালাচ্ছে। গত ১৫ মে তারা এক ইমেইল বার্তায় জানায়, কয়েকটি অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে এবং খশরুশাহীকে জানানো হয়েছে। অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে নতুন তদন্ত শুরু হয়েছে।

উবারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে তদন্ত কার্যক্রম পুরোপুরি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে। আর এর ফলাফল সম্পর্কেও স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে।’

হর্নসির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার এক বছর আগে থেকেই উবারের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও যৌন নিপীড়নের প্রচুর অভিযোগ আসছিল। সাবেক মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোলডার এর তদন্ত শুরু করেন। এক সময় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন কালানিক।

এক সময় ৪০০ জন নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের একটি অভিযোগ কোটি ডলারের বিনিময়ে মীমাংসার প্রস্তাব দেয় উবার। তাদের হয়ে মামলা পরিচালনাকারী তিন নারী প্রকৌশলীর একজন ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্য ও বর্ণবাদের অভিযোগে মামলা করেন।

অভিযোগের পেছনে থাকা কর্মীরা জানান, বেনামে আসা বেশিরভাগ অভিযোগই উড়িয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ করে বর্ণবাদের। এই অভিযোগগুলো প্রধান নির্বাহী বা প্রধান পরিচালন কর্মকর্তাকে জানানোর বিধান থাকলেও সেটাও এড়িয়ে যাওয়া হয়।