কারাগারে যেভাবে দিন কাটছে মরিয়মের

লন্ডনে কেনা চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধে দেওয়া অর্থের উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়ে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করছেন পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ। ৬ জুলাই রায় ঘোষণার পর ১‌৩ জুলাই লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আটক হয়ে থাকছেন আদিয়ালা কারাগারে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে সেখানকার নারী বন্দিদের জন্য সদ্য নির্মিত একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি কক্ষে থাকছেন তিনি। বই আর সহবন্দিদের আইনি পরামর্শ দিয়ে সময় কাটছে তার। একই মামলায় দশ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন মরিয়মের বাবা নওয়াজ শরিফ আর স্বামী সফদার আলীও ভোগ করছেন এক বছরের কারাদণ্ড। তাদেরও ঠাঁই হয়েছে আদিয়ালা কারাগারে।মরিয়ম নওয়াজ
লন্ডনে কেনা বিলাসবহুল চারটি ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধে দেওয়া অর্থের উৎস দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে ৬ জুলাই নওয়াজ শরিফ আর তার মেয়ে মরিয়মকে কারাদণ্ড দেয় আদালত। রায় ঘোষণার সময় লন্ডনে অবস্থানরত পিতা ও কন্যা ১৩ জুলাই দেশে ফিরেই গ্রেফতার হন তারা। পাকিস্তানভিত্তিক ডন জানিয়েছে, ইসলামাবাদ থেকে নওয়াজ আর তার মেয়ে মরিয়মকে রাওয়ালপিন্ডির কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। একই সময়ে ‘শিহালা ট্রেনিং কলেজ রেস্ট হাউস’কে সাব-জেল ঘোষণা করে ইসলামাবাদের চিফ কমিশনার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। প্রথম প্রজ্ঞাপনের কয়েক ঘণ্টার মাথায় জারিকৃত আরেকটি প্রজ্ঞাপনে শিহালা সাব-জেলে শুধু মরিয়মকে রাখার নির্দেশ জারি করা হয় এবং আগের প্রজ্ঞাপনটি অকার্যকর ঘোষণা করা হয়।

তবে জি-নিউজ ও জিও টিভি তাদের ১৩ জুলাই তারিখের খবরে জানায়, প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল,মরিয়মকে শিহালা ট্রেনিং কলেজের রেস্ট হাউসে রাখা হবে। ওই রেস্ট হাউসকে সাবজেল ঘোষণা করে হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে আদিয়ালা জেলে নারীদের জন্য নির্ধারিত প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে। জিও টিভি জানিয়েছে, মরিয়মকে কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে তিন দফা সিদ্ধান্ত পাল্টেছে পাকিস্তান সরকার। শেষ পর্যন্ত তাকে সাবজেলে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা শনিবার জিও টিভিকে নিশ্চিত করেছেন, মারিয়মকে আদিয়ালা জেলেই রাখা হয়েছে। সেখানে তাকে ‌‘বেটার ক্যাটাগরি’ শ্রেণির সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

কারা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ডনের খবরে বলা হয়েছে, দুই থেকে তিনবার মরিয়ম নওয়াজকে শিয়ালা রেস্টহাউসে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও তা প্রত্যাখান করেন তিনি।

উপনিবেশিক যুগের মতো করে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে আর কারাবন্দিদের জন্য ‘এ’, ‘বি’  আর ‘সি’ ক্যাটাগরি নেই। কয়েক বছর আগে লাহোর হাইকোর্টের নির্দেশনায় পাঞ্জাবের কারাবিধি পরিবর্তিত হয়। তখন থেকে বন্দিদের ‘অর্ডিনারি ক্যাটাগরি’ ও ‘বেটার ক্যাটাগরি’ নামের দুইটি ভাগে বিভক্ত করে সুবিধা দেওয়া শুরু হয়। নতুন ক্যাটাগরিতে একজন সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে জন্য আবেদনের মধ্যে দিয়ে ‘বেটার ক্যাটাগরি’র বন্দির মর্যাদা পেয়েছেন নওয়াজ। আর নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দেওয়ার আওতায় একই ক্যাটাগরির বন্দির মর্যাদা পেয়েছেন মরিয়ম।

ডন জানিয়েছে, এই মর্যাদার বন্দি হিসেবে তার যেসব সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা, তাও প্রত্যাখ্যান করেছেন মরিয়ম। এর পরিবর্তে তিনি নারী কারাবন্দিদের জন্য সদ্য নির্মিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি কক্ষে রয়েছেন। বই পড়ে আর অন্য কারাবন্দি নারীদের আইনি সহায়তা বিষয়ে আলাপ করে সময় কাটাচ্ছেন তিনি। আর আইন অনুযায়ী অন্য কারাবন্দিদের শিক্ষা দিয়ে নিজের সশ্রম দণ্ড খাটছেন তিনি। ডন জানিয়েছে, বাবা আর স্বামীর চেয়ে তুলনামুলক ভালো কক্ষে রয়েছেন মরিয়ম। তবে সবকিছুতেই সাধারণ কারাবন্দিদের মতোই থাকছেন তিনি।