পাকিস্তানের যে শহরে কেউ ভোট দেয় না

পাকিস্তানের রাবওয়াহ শহরে আনুষ্ঠানিক নাম চেনাব নগর। শহরটি পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত। ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন নাআহমদিয়া অধ্যুষিত এই শহরের বাসিন্দারা। পাকিস্তানে আহমদিয়াদের মুসলমান হিসেবে স্বীকৃতি নেই। ভোটার তালিকায় তাদেরকে অমুসলিম হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়েছে। তবে ‘অমুসলিম’ পরিচয় স্বীকার করে নিয়ে ভোট দিতে যেতে রাজি নন আহমদিয়ারা। তাদের দৃষ্টিতে পাকিস্তানের ওই আইন বঞ্চনামূলক। বিশ্লেষকরা বলেছেন, পাকিস্তানের পাঁচ লাখ আহমদিয়া যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করত তাহলে অন্তত ২০টি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনের ফলাফল নির্ধারণে তাদের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তানে আহমদিয়াদের ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলেও পাকিস্তানের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ওই সম্প্রদায়ের মানুষ। 
noname

ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বার্থে অমুসলিম পরিচয় স্বীকার করে নেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে আহমদিয়াদের মুখপাত্র সেলিম উদ দীন বলেছেন, ‘এটা আমাদের বিশ্বাসের বিষয়। সুতরাং আমরা কোনও আপোষ করতে পারব না’। আহমদিয়াদের অমুসলিম ভোটারদের তালিকায় রাখার বিষয়ে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এক চিঠিতে জানিয়েছে, ‘এ বিষয়টি আইনের দ্বারা নির্ধারিত। কমিশন এর পরিবর্তন করতে পারবে না।’ সেলিম উদ দীন ১৩ জুলাই এক বিবৃতিতে বলেছেন, আরও একবার পাকিস্তানের আহমদিয়াদের দেশটির বঞ্চনামূলক আইনের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হলো।

পাকিস্তানের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কঠিন হয়ে উঠতে থাকায় রাজনৈতিকভাবে চাপ বাড়ছে দেশটির আহমদিয়াদের ওপর। তাদের নেতারা রয়টার্সকে বলেছেন, আহমদিয়া বিরোধী প্রচারণা আগের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে নির্বাচনকে সামনে রেখে। রক্ষণশীল ভোটারদের সমর্থন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলো আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছে।  নির্বাচনে দুইটি ইসলামি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করায় অন্যান্য দল রক্ষণশীল ভোটারদের কাছে টানতে বাড়িয়ে দিচ্ছে আহমদিয়া বিরোধী বক্তব্য।

গত বছর আহমদিয়াদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা এনে দিতে পারত এমন সংশোধনীর প্রস্তাব করা হলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। তখন পাকিস্তানের সংসদে আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হয়। একটি রাজনৈতিক দল এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি ও পালন করে। 

পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, আহমদিয়ারা তাদের প্রার্থনার স্থানকে মসজিদ বলতে পারবে না এবং কোরআন তেলাওয়াত করতে পারবে না। এমন কি ইসলামি সম্ভাষণও ব্যবহার করতে পারবে না। প্রচারণামূলক কোনও কিছু প্রকাশ করাও তাদের জন্য নিষিদ্ধ। আহমদিয়ারা নিজেদের মুসলমান হিসেবে দাবি করে। তবে তাদের বিশ্বাস, ১৯৮৯ সালে যে মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানী তাদের সম্প্রদায়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি একজন নবী।

রয়টার্স লিখেছে, পাকিস্তানের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন চৌধুরী জাফরুল্লাহ খান। তিনি আহমদিয়া ছিলেন। জিন্নাহ যেখানে বিশ্বের দরবারে পাকিস্তানের মুখপাত্র হিসেবে একজন আহমদিয়াকে দায়িত্ব দিতে দ্বিধা করেননি, সেখানে বর্তমান পাকিস্তানে আহমদিয়াদের মুসলমান হিসেবে পরিচয় দেওয়াটাও বারণ। আইনে নিষেধ থাকায় চৌধুরী জাফরুল্লাহর খানের কবর থেকে সব ইসলামি লেখা মুছে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন আহমদিয়ারা।