যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব ধরনের কর কমানোর প্রস্তাব ইইউ কমিশনারের

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি আরোপ করা শাস্তিমূলক কর প্রত্যাহার করলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সব পণ্যের কর কমানোর ব্যাপারে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন ইইউ’র বাজেট কমিশনার গুয়েনথার ওয়েটিঙ্গার। বুধবার (২৫ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য ইইউ প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটন রওনা হওয়ার আগে তিনি এই প্রস্তাব দিলেন। তিনি বলেন, ‘ইইউ চায় যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ইউরোপ থেকে অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাত আমদানির ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করবে’।

ইইউ’র বাজেট কমিশনার গুয়েনথার ওয়েটিঙ্গার

গত মার্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেসময় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে’ তিনি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয় ১ জুন। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্য ঘনিষ্ঠ মিত্রদের বাণিজ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। এর জের ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২৮০ কোটি ইউরো মূল্যের মার্কিন পণ্যে আমদানি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি ২২ জুন থেকে কার্যকর হয়।     

গুয়েনথার ওয়েটিঙ্গার বলেন, ‘প্রথমত আমরা আশা করছি বিদ্যমান শাস্তিমূলক কর প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। তারপর আমরা সব সেক্টরের সব কর কমানো ও পুনর্গঠনের জন্য আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি’। তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে আমরা বাণিজ্য দ্বন্দ্ব নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা এড়াতে চাই’।

একটি জার্মান রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওয়েটিঙ্গার বলেন, ‘কেউ চাইলে বিদ্যমান কর ব্যবস্থাকে জটিলতামুক্ত করার চেষ্টা করতেই পারেন। তাহলে বিভিন্ন ধরনের পন্য ও সেবার জন্য কর কমানো যেতে পারে’। তিনি বলেন, ‘এটা আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে যা অর্ধেক বছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমরা আগামী শরৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এটা শুরু করতে পারি’।

ওয়েটিঙ্গার প্রস্তাব দেন, ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যে বিদ্যমান ট্রানসাল্টিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পার্টনারশিপ বা টিটিআইপি নামে পরিচিত চুক্তি নিয়ে আলোচনা করে তা আরও সহজ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘কেউ একটি সহজ টিটিআইপি করার চেষ্টা করতে পারে’।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লাউডি জানকার অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কর আরোপের সৃষ্ট বাণিজ্য উত্তেজনা নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হবেন। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইউরোপীয় গাড়ি আমদানির ওপর একই ধরনের করে আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছে। সোমবার কমিশন জানায়, জাকনার যুক্তরাষ্ট্রে নির্দিষ্ট বাণিজ্য প্রস্তাব নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করবেন না। ওয়েটিঙ্গার বলেন, ‘বাণিজ্য যুদ্ধের চেয়ে অন্য যেকোনও কিছু ভাল হবে’।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে গাড়ি আমদানির ওপর অধিক কর আরোপের বিষয়টি তুলে ধরে ট্রাম্প বার বার অভিযোগ করে আসছেন যে, ইউরোপীয় জোট তাদের বাণিজ্যিক ‘শত্রু’। ইইউ কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গাড়ি আমদানিতে ইউরোপ বেশি কর আরোপ করলেও ট্রাকসহ অন্যান্যা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বেশি কর আরোপ করে থাকে। জাকনারের সফরসঙ্গী ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার সিসিলিয়া মালমস্ট্রম গত সপ্তাহে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাড়ির ওপর কর বাড়ালে তার জবাব দেওয়ার জন্য ইইউ মার্কিন পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করছে।