‘ফোর্স ম্যারেজ’ ইস্যুতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

কনে, ছবিটি এএফপি’র সৌজন্যে

‘ফোর্স ম্যারেজ’ বা জোর পূর্বক বিয়ে নিয়ে বিলেতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

শুধুমাত্র ব্রিটেনের ভিসা পাওয়ার জন্য অনেক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নারীকে বিয়েতে বাধ্য করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ পেয়েছে ব্রিটিশ সরকার।তা সত্ত্বেও বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের অনেক  অভিবাসীকে ব্রিটেনে বসবাসের অনুামতি দেওয়া হয়েছে।

ফোর্স ম্যারেজ নিয়ে কাজ করা ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো এ অভিযোগ তুললেও ব্রিটেনের হোম অফিস তা অস্বীকার করেছে।

এ সপ্তাহে ব্রিটেনের ডেইলি দ্য টাইমসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য। ওই অনুসন্ধানে দেখা গেছে— এরকম ৮৮টি ঘটনার ক্ষেত্রে ভিকটিম ব্রিটিশ তরুণীরা তাদের স্বামীর ভিসা ব্লক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্রিটেনের ভিসা পেয়েছেন ৪২ জন।

২০১৪ সালে ব্রিটেনে ফোর্স ম্যারেজকে অবৈধ ঘোষণা করে সরকার। নতুন আইনে অভিযুক্তদের জন্য সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়।

যুক্তরাজ্যে ফোর্স ম্যারেজ ইউনিটের (এফ এম ইউ) তথ্য মতে, গত বছর ১২৯জন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নারী ফোর্স ম্যারেজের শিকার হন।

প্রসঙ্গত, নিজের কন্যাকে বাংলাদেশে নিয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে  বিয়ে দেওয়া হয়, এমন অপরাধে গত সপ্তাহে বাংলাদেশি এক দম্পতিকে আট বছরের কারাদণ্ড দেয় ব্রিটেনের একটি আদালত। গত ৩০ জুলাই তাদের সাজা ঘোষণা করা হয়। বিচারক তার রায়ে বাবাকে সাড়ে চার বছরের ও মাকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন।

জানা যায়, ১৮ বছর বয়সী মেয়েকে ঈদের ছুটি কাটানো ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলে ছয় সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে নিয়ে যান তার মা-বাবা। এর এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে মেয়েটিকে বিয়ের ওই পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হয়। এতে অস্বীকৃতি জানালে  ওই কিশোরীকে সহিংস আচরণের হুমকিও দেন মা বাবা।

এ ব্যাপারে শনিবার বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে ব্রিটেনে কমিউনিটি নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, ‘ফোর্স ম্যারেজ সাম্প্রতিক একটি বড় ইস্যু। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইস্যুটির অপব্যবহারও হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের পর বনিবনা না হওয়ার কারণেও ফোর্স ম্যারেজের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কোনও মা-বাবাই সন্তানের অমঙ্গল চান না। কিন্তু, তারপরও গত সপ্তাহে মা-বাবার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক মেয়ের দায়ের করা মামলায় রায় হয়েছে। কন্যাকে জোর করে দেশে নিয়ে বিয়ে দেবার ঘটনায় মা- বাবা দুজনই জেলে গেছেন। কমিউনিটির জন্য এটি একটি লজ্জা ও বেদনাদায়ক খবর।’

লন্ডনের নারী নেত্রী সৈয়দা নাজনীন সুলতানা শিখা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত এক দশকে দেশে নিয়ে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার হার অনেক কমে গেছে। আর এদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে ফোর্স ম্যারেজের সুযোগই নেই। জোর করে বিয়ে দেবার বিষয়টি আসলে পাকিস্তানি কমিউনিটির সমস্যা। আমাদের নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করে খবর প্রকাশ পাচ্ছে।’

ফোর্স ম্যারেজ বা জোর পূর্বক বিয়ের বিষয়ে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ শেখ ওয়াহিদ রহমান বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলেই এই অভিযোগ উঠছে। তবে এক দশক আগের চেয়ে এই ঘটনা অনেক কমে এসেছে।’