বিক্ষোভের মধ্যেই কাশ্মিরের বিশেষ আইন বাতিলে রায় আজ

বেশ কয়েকটি সংগঠনের ডাকা রাজ্য অবরোধের মধ্যেই কাশ্মিরের বিশেষ আইন বাতিল আবেদনে রায় দেবে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। অনুচ্ছেদ-৩৫এ নামে পরিচিত ওই আইনে রাজ্যের বাসিন্দা ছাড়া অন্য কারো সম্পত্তি ক্রয় এবং সরকারি চাকরিতে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা রাখা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে এই আইন বাতিলের জন্য একটি আপিলের পর এর বিরোধিতায় উত্তাল হয়ে উঠেছে কাশ্মির। তাদের আশঙ্কা, এই আইন বাতিল হলে ভারতের উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর লোকেরা  কাশ্মিরিদের জনতাত্ত্বিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে দেবে।বিশেষ আইন বাতিলের প্রতিবাদে কাশ্মিরে বিক্ষোভ
এই আইন বাতিলে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মোট চারটি আবেদন করা হয়েছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, এর মধ্যে তিনটি আবেদনই করেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত উই দ্য সিটিজেন নামের একটি এনজিও। তাদের দাবি, আইনটি উচ্চমাত্রায় বৈষম্যমূলক। ফলে তা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হোক। তাদের যুক্তি এই আইন পার্লামেন্টে অনুমোদিত নয় বরং তা প্রেসিডেন্টের আদেশে জারি করা।

এসব আবেদনের শুনানির মধ্যেই জম্মু-কাশ্মিরের রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ ও বাসিন্দারা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কাশ্মিরের স্বাধীনতাপন্থী নেতা সৈয়দ আলী গিলানি, মিরাওয়াইজ ওমর ফারুক, ও ইয়াসিন মালিক দুই দিনের রাজ্য অবরোধের ডাক দেন। সম্মিলিত আন্দোলন ব্যানারে ডাক দেওয়া এই অবরোধ রবিবার থেকে শুরু হয়েছে।  

হিন্দুস্তান টাইমস’র  খবরে বলা হয়েছে, অবরোধের সময়ে রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে দোকানপাট, বাজার ও বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো বন্ধ রাখা হয়। বন্ধ রয়েছে যানবাহন। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।

স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধৃত করে হিন্দুস্তান টাইমস’ বলছে, রাজ্যজুড়ে যে তীব্র বিক্ষোভ চলছে তা গত কয়েক বছরের মধ্যে দেখা যায়নি। রাস্তায় লোক চলাচল খুবই সীমিত। এমনকি রিকশা, অটোরিকশাও চলছে না শ্রীনগরের রাজপথে।

অবরোধের কারণে সাময়িকভাবে তীর্থযাত্রীদের জন্য অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। কাশ্মির উপত্যকার বালতাল ও ফাহালগাম ক্যাম্পে প্রায় তিন লাখ তীর্থযাত্রী অবস্থান করছেন।

বিশেষ আইন বাতিলের আবেদনের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে আদালতে মধ্যবর্তী আবেদন দাখিল করেছে জম্মু ও কাশ্মির বার অ্যাসোসিয়েশন। এই আবেদনের শুনানিতে বিলম্ব করার আবেদন করেছেন রাজ্যের গভনর্র এনএন ভোহরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছেও তিনি এই বিষয় উত্থাপন করেছেন। তিনি চান, রাজ্যে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই এই আবেদনের শুনানি করা হোক।

এই আইনটি প্রণয়ন করেছিলেন কাশ্মিরের শেষ রাজা মহারাজা হরি সিং। ১৯২৭ সাল থেকে এই আইন জারি আছে। পরে স্বাধীনতার পর তা ভারতীয় সংবিধানে যুক্ত করা হয় এবং ১৯৫৪ সালে তা গৃহীত হয়।

এই আইন বাতিলের ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীকে একত্রিত করেছে। এই সপ্তাহের শুরুতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, পরিবহন সমিতি ও ফল উৎপাদকদের ২৭ টি সংগঠনে প্রতিনিধিরা আইনটি বহাল রাখার অঙ্গীকার করেছেন। এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, আইনটি জম্মু-কাশ্মিরের জনগণের জন্য জীবন-মৃত্যুর মতো বিষয়। আইনটি রক্ষায় আমরা রক্ত দিতেও প্রস্তুত আছি।