রফতানির চেয়ে আমদানি বেশি চীনের

১৭ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীনের রফতানির বাণিজ্যের পরিমাণ দেশটির আমদানি বাণিজ্যকে ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ, চলতি বছর এখন পর্যন্ত বেইজিং-এর রফতানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ বেশি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। এ চিত্র সাম্প্রতিক বছরগুলোর বিপরীত।

nonameবিগত বছরগুলোতে যেখানে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছিল চীন, সেখানে এ বছরের প্রথম চার মাসেই এর ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। গত জানুয়ারি-এপ্রিল প্রান্তিকে আমদানির তুলনায় বাড়তি রফতানি ব্যায়ের পরিমাণ বেশি ছিল ৩৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। তবে অর্ধবার্ষিকে গিয়ে এটি ২৮ দশমিক ৩ বিলিয়নে নেমে আসে। চীনের স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ (এসএএফই)-এর এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ খাতে চীনের উদ্বৃত্তের পরিমাণ ১৫৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।

২০১৭ সালে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল চীন। চলতি বছর এটি কমিয়ে এনে ৬ দশমিক ৫ নির্ধারণ করা হয়েছে।

চীনের পিং অ্যান সিকিউরিটিজের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝাং মিং বলেন, পণ্য বাণিজ্যে চাপের পাশাপাশি সেবাখাতে মানুষে ব্যায় বেড়েছে। ফলে এই ঘাটতি অব্যাহত থাকতে পারে।

এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সাম্প্রতিক বাণিজ্য যুদ্ধও এক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

আগামী ২৩ অগাস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ১৬০০ কোটি ডলার মূল্যের রফতানি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে। এমন বাস্তবতায় বুধবার চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, চীন নিজের স্বার্থ ও বিশ্বের বহুপক্ষীয় বাণিজ্য-ব্যবস্থা রক্ষা করতে সমমানের পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।

তিনি জানান, মার্কিন শুল্ক যে সময় থেকে কার্যকর হবে, ঠিক সে সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ১৬০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর চীনের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

চীনা মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজস্ব আইনকে আন্তর্জাতিক আইনের ওপর স্থান দিয়েছে।

এদিকে চীনের বিরুদ্ধে একটি যৌথ জোট গঠনে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ল্যারি কুদলো সম্প্রতিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে এ তথ্য জানান। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যেই তিনি এ নিয়ে মন্তব্য করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক ল্যারি কুদলো বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে যাচ্ছি যাতে চীনের বিরুদ্ধে যৌথ জোট গড়তে পারি। তারা জানে আমরা কী চাই। কিন্তু তারা সন্তোষজনক সাড়া দিচ্ছে না।’

ইনটেলেকচুয়ান প্রোপার্টিজ বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ সম্পর্কে ল্যারি কুদলো বলেন, অশুল্ক বাধা ও ভর্তুকি প্রত্যাহার করে শুল্কবিহীন সমান সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃঢ় সংকল্পকে ছোট না করে দেখাই চীনের জন্য ভালো। এছাড়া ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টিজ চুরি ও জোরপূর্বক স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের সংস্কারের দাবিও মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান কুদলো। তিনি বলেন, একাধিক বৈঠকে আমরা তাদের কাছে এসব দাবি তুলে ধরেছি। সূত্র: পিটিআই, এনডিটিভি, আনাদোলু এজেন্সি।