এনআরসি নিয়ে আপত্তি গ্রহণ শুরু, নতুন নথি নেই বাদ পড়াদের

ভারতের আসাম রাজ্যের খসড়া নাগরিক তালিকা (এনআরসি) থেকে বাদ পড়া ৪০ লাখ বাসিন্দার কাছে দাখিল করার মতো আর কোনও নতুন নথি নেই। শুক্রবার রাজ্য সরকার ৩০ জুলাই প্রকাশিত এনআরসিতে তালিকাভূক্ত না হওয়া ব্যক্তিদের অভিযোগ ও আপত্তি গ্রহণ শুরু করেছে। ফলে এখন আসামে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত ওই ৪০ লাখ বাসিন্দাকে নিজেদেরকেই নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এখবর জানিয়েছে।

7dp3qkl8_assam-citizen-list_625x300_12_August_18

৩০ জুলাই আসামের রাজধানী গৌহাটি থেকে রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন তালিকা উন্মুক্ত করেন। নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৩ কোটি ২৯ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ২ কোটি ৮৯ লাখকে চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় স্থান পায়নি রাজ্যটির ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জন বাসিন্দা।

৪৮ বছরের সুনিল সরকার, পেশায় দর্জি। আসামের রাজধানী গৌহাটি থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে দিমোরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আসাম নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর থেকেই উদ্বেগে আছেন। ধর্মীয় দাঙ্গার আশঙ্কায় সিলেট থেকে তার বাঙালি-হিন্দু পূর্বসুরীরা আসামের নাগাওতে এসেছিলেন ১৯৬০ দশকের দিকে। তিনি লিখতে বা পড়তে পারেন না। নেই জন্ম নিবন্ধন সনদ। কিন্তু তিনি দাবি করেন তিনি আসামেই জন্মেছিলেন।

২০১৫ সালে তাকে একটি নোটিশ পাঠায় ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনাল। পরে বলা হয় তিনি ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু এখন তিনি ও তার পরিবারের তিন সদস্যকে আসামের নাগরিক তালিকায় নেই।

এনডিটিভিকে সরকার বলেন, আসামের প্রথম খসড়া নাগরিক তালিকায় আমার পরিবারের তিন সদস্যের নাম ছিল। আমরা বাবার উত্তরাধিকার সনদপত্র দাখিল করেছি। ১৯৭১ সালের আগের ভোটের তালিকায় তার নাম ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় নাগরিক তালিকায় আমাদের পুরো পরিবারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

শুক্রবার হাজারো মানুষ তাদের কাছের নাগরিক সেবা কেন্দ্রে হাজির হন। এনডিটিভি এমন কয়েকটি কেন্দ্র সরেজমিন ঘুরে দেখে। এতে দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষই নাগরিক তালিকায় নেই। তাদের উত্তরাধিকার সনদপত্র নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়েছে। এটাই তাদের আসামে নাগরিক হিসেবে প্রমাণের মূল দলিল। তালিকায় না থাকা ৪০ লাখ বাসিন্দা এনআরসির খসড়া নিয়ে অভিযোগ ও আপত্তি জানানোর সুযোগ এখনও পাবেন। তবে অভিযোগ নিষ্পত্তির পুরো প্রক্রিয়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ১৬ আগস্ট আদালতে এনআরসি কর্তৃপক্ষকে বাদ পড়া নাগরিকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া দাখিল করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

কামরূপ জেলার খেত্রি এলাকা থেকে আসা রহিমা বেগম চোখে জল নিয়ে এনডিটিভিকে বলেন, তালিকায় আমার ও শাশুড়ির নাম নেই। আমাদের পঞ্চায়েত সনদসহ অন্যান্য নথিপত্র রয়েছে। আজ বলা হয়েছে আমাদের সম্পর্কসূত্রের যে নথি দেওয়া হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কয়েক হাজার বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেছে। আমাদের আর কোনও নতুন নথি নেই দাখিল করার জন্য।

এনডিটিভি লিখেছে, শুক্রবার নাগরিক সেবা কেন্দ্র গুলোতে রহিমার মতো হাজারো মানুষ বুঝতে চেষ্টা করছিলেন কেন তাদের নাম তালিকায় নেই।

দিমোরিয়া থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সোনাপুর গ্রামে ১০০ সদস্যের একটি বড় মুসলিম পরিবারের সবাইকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে উত্তরাধিকার সনদপত্রের একটি ত্রুটির জন্য। পরিবারটির সদস্য মোহাম্মদ সাদেক আলি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের ১০০ সদস্য বাবার উত্তরাধিকার সনদপত্র জমা দিয়েছি। যা কর্তৃপক্ষই দিয়েছে। ১৯৫১ সালের এনআরসিতে আমারা বাবার নাম  সুবান আলির পরিবর্তে ভুলে ছাপা হয়েছে সুবান শেখ। এখন কর্তৃপক্ষ সেটাও গ্রহণ করছে না।’ তিনি জানান, আদালতের এফিডেভিটও কোনও কাজে আসছে না।

গৌহাটিতে তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বেশিরভাগ জীবিকার সন্ধানে আসা অভিবাসী। তাদেরকে এখন প্রমাণ দিতে হবে যে ১৯৭১ সালের পূর্বে তাদের পিতা-মাতা ভারতে বাস করেছিলেন। এসব অভিবাসীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, আসাম থেকে উত্তরাধিকার সনদপত্র যাচাইয়ের জন্য অন্য রাজ্যগুলোতে পাঠানো হলেও তা ফেরত পাঠায়নি।

বিহারের মতিহারি থেকে আসা অভিবাসী রাজিব শাহ বলেন, তালিকায় আমার ও স্ত্রীর নাম নেই কিন্তু সন্তানের নাম রয়েছে। আজ আমাকে বলা হয়েছে, আমার উত্তরাধিকার নথিতে গরমিল রয়েছে। আমি বিহার থেকে আসা। আমার দাদার উত্তরাধিকার নথিতে কিছু অমিল রয়েছে। আমাকে এখন বিহারে গিয়ে তা সংশোধন করতে হবে।

এনডিটিভি আরও লিখেছে, এখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে অভিযোগ ও আপত্তি নিষ্পত্তির মাধ্যমেই আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রণয়ন করা হবে। আর এটাই তালিকা থেকে বাদ পড়াদের জন্য সর্বশেষ ও একমাত্র সুযোগ।