মিয়ানমারকে চাপে রাখতে যুক্তরাজ্যের আরও পদক্ষেপ চান রুশনারা আলী

সংকট শুরুর বর্ষপূর্তির এক সপ্তাহ আগে শুক্রবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদ ও পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) রুশনারা আলী বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কথা না ভোলার আহ্বান জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্য দ্বিগুণ বাড়ানোর আহ্বানের পাশাপাশি তিনি এই সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার তাগিদ দেন। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে কানাডা বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে রুশনারা বলেন, তবে যুক্তরাজ্যকে এখনও অনেক কিছু করতে হবে।রুশনারা আলী
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে শুরু করে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হামলা শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ওই হামলাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ ও ‘গণহত্যা’ আখ্যা দেয়। জীবন বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

পূর্ব লন্ডনের বেন্থাল গ্রিন ও বো এলাকার লেবার পার্টির এই এমপি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংস সহিংসতার এক বছর পূর্ণ হবে আগস্টে, কিন্তু এই মুহূর্তে কক্সবাজারে চলছে পূর্ণ বর্ষা মৌসুম।

রুশনারা বলেন, ‘অকল্পনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছে রোহিঙ্গারা। বছরের পর বছর ধরে চলা কাঠামোগত বৈষম্যের ভয়ঙ্কর বর্ণনা আমি শুনেছি। সংকট চলা অবস্থায় বিশ্ববাসীর তাদের পরিস্থিতির কথা অবশ্যই ভুলে যাওয়া উচিত হবে না।’ এসব শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের আহ্বান জানানো তহবিলের মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ পাওয়া গেছে জানিয়ে রুশনারা রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষনিক প্রয়োজন মেটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানান। এছাড়া সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় রোহিঙ্গাদের জীবন পুনর্গঠনে রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পেতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা জোরালো করার আহ্বান জানান তিনি।

রোহিঙ্গাদের অধিকার ও মিয়ানমার বিষয়ক যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সর্বদলীয় গ্রুপের কো চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রুশনারা বলেন, রোহিঙ্গাদের সমর্থনে নেতৃত্ব দেওয়ার অনন্য অবস্থান নেওয়ায় যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যকার বন্ধন জোরালো থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে কক্সবাজারের মানুষের উদারতা তুলনাহীন। ভবিষ্যত পরিকল্পনায় চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা সেখানকার স্থানীয়দের দীর্ঘমেয়াদী চাহিদার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে।

রুশনারা বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে দায়বদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রাখা দরকার। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) দেশটির সামরিক বাহিনীকে বিচারের মুখোমুখি করতে সহায়তা করছে কানাডা। এছাড়া মিয়ানমারের জঘণ্য এই অপরাধের প্রমাণ সংরক্ষণেও পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডা। কিন্তু যুক্তরাজ্যকে অবশ্যই আরও অনেক কিছু করতে হবে।