যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আইএস সদস্যের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কে হত্যা পরিকল্পনার সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক আইএস সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে যুক্তরাজ্যের একটি আদালত। শুক্রবার পুরনো বেইলি আদালতে তার বিরুদ্ধে এই সাজা ঘোষণা করা হয়। নাইমুর জাকারিয়া রহমান নামের ওই যুবকের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে থেরেসা মে’র মাথা শরীর থেকে আলাদা করে ফেলার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।নাইমুর জাকারিয়া রহমান নামের যুবকের ছবিটি প্রকাশ করেছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ
জাকা‌রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের নিরাপত্তা গেটে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। ছুরি, পিপার স্প্রে এবং সুইসাইড ভেস্ট ব্যবহার করে তাকে খুন করতে চেয়েছিল নাইমুর। তবে নাইমুরের এই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের যৌথ তৎপরতায়।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ২১ বছর বয়সী নাইমুর বলেছিল, ‘আমি পার্লামেন্টে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে চেয়েছিলাম। আমি থেরেসা মে’কে হত্যার পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলাম।’ এমআই৫'র কর্মকর্তাদের তিনি বলেছিল, ‘গ্যাস ট্যাঙ্কার ভর্তি বড় বড় লরি রাখা ছিল। আরেক ভাই যদি এটা চালিয়ে পার্লামেন্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারতো আমি বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতাম।’

শুক্রবার আদালতে রায় শোনাতে গিয়ে বিচারক হ্যাডন কেভ তাকে কমপক্ষে ৩০ বছর কারাগারে রাখার আদেশ দেন। বিচারক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত বস্তুগত সময়ে রহমান বিশ্বাস  করেছিল তার কাছে থাকা সব যন্ত্র সত্যিই কার্যকর আর মারাত্মক ক্ষতি করতে সক্ষম।’ তিনি ‘অসামান্য’ এই মামলা দুর্দান্তভাবে তদন্ত, প্রস্তুত এবং আদালতে উপস্থাপন করায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

রহমানের এই পরিকল্পনা উন্মোচিত হয় যখন সে এফবিআইয়ের একজন ছদ্মবেশি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই এজেন্ট নিজেকে অনলাইনে আইএসের এক কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করে। আদালতের বিচারের সময় জানা যায় সে ভেবেছিল তাকে একজন আইএস কর্মকর্তা তাকে সাহায্য করছে। আসলে ওই আলোচনা ছিল মেট্রোপলিটন পুলিশ ও এমআই৫’র যৌথভাবে চালানো সন্ত্রাসবিরোধী বড় একটি গোপন অভিযানের অংশ।

মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার ডীন হাইডন বলেন, তার উদ্দেশ্য ছিল ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের গেটে যাওয়া। তার কাছে থাকা একটি ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটাতে যাচ্ছিল সে যাতে সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তারা ও সেখানে থাকা মানুষ মারা পড়তো। তার উদ্দেশ্য ছিল এরপরই গেট দিয়ে ঢুকে পড়ে কাছে থাকা আরেকটি ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের মধ্যে ঢুকে পড়া আর এরপর ছুরি অথবা বন্দুক দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলা চালানো। এই প্রক্রিয়ায় সে লন্ডনের কেন্দ্রে সরকারি দফতরের মধ্যে নিজের মৃত্যু ঘটাতে চেয়ে শহীদ হতে চেয়েছিল।

গত বছর গোপন অভিযানে থাকা ছদ্মবেশি পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর  ২৮ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের কাউন্টার টেরোরিজম কমান্ড সদস্যরা দক্ষিণ-পূর্ব বার্মিংহামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় নাইমুর জাকারিয়া রহমানের কাছে দুটি ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) পাওয়া যায়। এই বিস্ফোরক যন্ত্র যা অল্প সময়ে সহজে তৈরি করা যায়।  একইসঙ্গে পৃথক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় মোহাম্মদ আকিব ইমরান নামের আরেক ব্যক্তিকে সহায়তার অভিযোগও আনা হয় তার বিরুদ্ধে। 

আদালতে জানানো হয় গত বছরের আগস্টে কম বয়সী মেয়েদের ছবি সন্দেহভাজন স্থানে পাঠানোর অভিযোগে গ্রেফতারের পর রহমান পুলিশের নজরদারিতে আসে। তবে ওই অপরাধে তাকে পরে অভিযুক্ত করা হয়নি। তবে ওই সময়ে তার মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে ধারণা করা হয় তার চরমপন্থী মতাদর্শ থাকতে পারে।

আদালতে শুনানির সময়ে জানানো হয় নাইমুরের এক চাচা আইএস সদস্য। সে সিরিয়ায় আছে। তার সঙ্গে নাইমুরের যোগাযোগ ছিল। সেই মূলত নাইমুরকে ব্রিটেনে হামলা চালাতে প্ররোচিত করেছে। দুই বছর ধরে এ হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো নাইমুর। তবে গত গ্রীষ্মে এক ড্রোন হামলায় তার সেই চাচা ২৮ বছর বয়সী মুসাদ্দিকুর রহমান মারা যায়।