ইরানের দূতাবাসে ইরাকের বিক্ষোভকারীদের অগ্নিসংযোগ

নাগরিক সেবা ও কাজের দাবিতে বিক্ষোভরত ইরাকের নাগরিকেরা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বসরায় ইরানের দূতাবাসে অগ্নিসংযোগ করেছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর সেখানে কার্ফু জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। ইরানের দূতাবাসে হামলার সময়ে সেটি প্রায় খালি ছিল বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নিজ দেশের রাজনীতিতে তেহরানের প্রভাব নিয়ে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার বসরায় দূতাবাস ভবনে ঢুকে পড়ে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম ঘাসেমি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফারসকে বলেছেন, ইরানের নাগরিকদের বসরা ছেড়ে আসতে বলা হয়নি।বসরায় ইরানের দূতাবাস ভবনে ইরাকের বিক্ষোভকারীদের অগ্নিসংযোগ
প্রায় ২০ লাখ মানুষের বাস ইরাকের বসরা শহরে। গত সোমবার থেকে চাকুরি ও নাগরিক সেবার দাবিতে সেখানে বিক্ষোভ করছেন বাসিন্দারা। বিক্ষোভ শুরুর পর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সেখানে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। শুক্রবার বিভিন্ন সরকারি ভবন ও ইরানের দূতাবাসে হামলার পর শহরে কার্ফু জারি করা হয়েছে। ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, রাস্তায় কাউকে দেখা মাত্র গ্রেফতার করা হবে।

স্থানীয়দের দাবি গরমের সময়ে নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ এবং দুর্নীতি ও অপশাসনের কারণে অবকাঠামো ভেঙে পড়তে থাকায় বিক্ষোভে নামতে বাধ্য হয়েছেন তারা। কাতারের দোহা ইনস্টিটিউটের নীতি বিশ্লেষক পরিচালক মারওয়ান কাবালান বলেছেন, এই বিক্ষোভ থেকে ইরাকে ইরানের প্রভাব নিয়ে অসন্তোষের চিত্র বোঝা যাচ্ছে। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে যারা ইরাকের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন তারা সত্যিকার অর্থে ছিলেন ইরানের মিত্র। মানুষ সেইসব এলিটদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে যারা ইরানের সমর্থন পেয়ে আসছে। এছাড়া তারা ইরাকের দক্ষিণে ইরানের প্রভাবের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করছেন। কাবালান বলেন, ‘সম্প্রতি ইরানও ইরাকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি ইরাক বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না। সে কারণেও মানুষের ক্ষোভ ইরানের ওপর গিয়ে পড়েছে’।

গত মে মাসে নির্বাচনের পর ইরাকের রাজনীতিবিদরা যখন নতুন একটি সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তখনই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সেখানকার বাসিন্দারা। খনিজ সমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা দীর্ঘদিন থেকেই উন্নয়ন বঞ্চিত থাকার দাবি করে আসছেন। শুক্রবার দেশটির প্রভাবশালী শিয়া নেতা আয়াতুল্লাহ আল সিসতানি বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের দূতাবাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

রাজধানী বাগদাদে আয়াতুল্লাহ সিসতানি অস্থিরতার জন্য রাজনীতিবিদদের দায়ী করে নতুন সরকার গঠনের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরাকের রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার কারণেই বসরার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, বিগত সরকার গঠনের সময়ের মতো যদি একই মানদণ্ড অনুযায়ী নতুন সরকার গঠন হয় তাহলে এই বাস্তবতার বদল ঘটবে না। নতুন সরকারের ওপর অবশ্যই ভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

চলমান অস্থিরতা নিয়ে আলোচনার জন্য শনিবার আইনপ্রণেতাদের জরুরি অধিবেশন আহ্বান করেছেন ইরাকের অন্তবর্তী পার্লামেন্টের নেতা।

দূষিত পানি সরবরাহের কারণে ৩০ হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর গত জুলাই মাস থেকেই বিক্ষোভ করছে ইরাকের নাগরিকেরা। দক্ষিণাঞ্চলী শহর বসরা সেই বিক্ষোভের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

গত কয়েকদিনে রাষ্ট্রীয় পরিচালনাধীন ইরাকিয়া টিভি কার্যালয় ও ক্ষমতাসীন দাওয়া পার্টির প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া ইরাকের সর্বোচ্চ ইসলামিক কাউন্সিল ও বদর অর্গানাইজেশনের কার্যালয়ও হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। এসব সংস্থার নেতারা নতুন সরকার গঠনের জোটের অংশ হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।