৯/১১ হামলা: ১৭ বছর পরও চলছে নিহতদের শনাক্তের কাজ

যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নিহতদের অনেকের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ১৭ বছর পরও নিউ ইয়র্কের একটি ফরেনসিক ল্যাবে দেহাবশেষগুলো শনাক্তে একাগ্রচিত্তে কাজ চলছে। সর্বশেষ একজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে গত জুলাইয়ে। আর তারও প্রায় এক বছর আগে শনাক্ত হয়েছিল অপর এক ব্যক্তির পরিচয়। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

নিউ ইয়র্কের ফরেনসিক ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার কাজ চলছে
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে এক যোগে চার-চারটি বিমান নিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল। দুটি বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত হানে। নিমেষে ধসে পড়ে ভবন দুটি। আরেকটি বিমান নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তবে চতুর্থ বিমানটি নিয়ে জঙ্গিরা পূর্ব নির্ধারিত স্থানে হামলা চালাতে চাইলেও যাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পেনসিলভেনিয়ার আকাশে বিধ্বস্ত হয় সেই বিমান। ৯/১১ এর ভয়াবহ ওই হামলায় নিহত হন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। ঘটনাস্থল থেকে ৭০ হাজার মানুষকে জীবিত উদ্ধারের তথ্য লিপিবদ্ধ করে মার্কিন স্বাস্থ্যবিভাগ।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি'র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০১ সালে ওই হামলার ঘটনায় নিহত ২ হাজার ৭৫৩ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৬৪২ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনও শনাক্ত করা যায়নি ১ হাজার ১১১ জনকে। হামলার পর খণ্ড খণ্ড অবস্থায় মানুষের ২২ হাজারটি দেহাবশেষ উদ্ধার হয়। আর এসব দেহাবশেষের সবগুলোই এরইমধ্যে ১০ থেকে ১৫ বার করে পরীক্ষা করা হয়েছে।

দেহাবশেষগুলোকে গুঁড়া করা হয় এবং সেগুলোকে দুইটি রাসায়নিকে মেশানো হয়। তা ডিএনএকে শুষে নেয়। তবে এ প্রক্রিয়ায় সবসময় সফল হওয়া যাবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মার্ক ডেসিরে বলেন, ‘কাজ করার জন্য হাড় সবচেয়ে কঠিন জৈবিক উপাদান। তার ওপর যখন এগুলো ঘটনাস্থলে অবস্থিত কিছু জিনিসের সংস্পর্শে আসে (যেমন-আগুন, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, সূর্যালোক, জেট জ্বালানি, ডিজেল জ্বালানি) তখন তাতে ডিএনএ’র নমুনা নষ্ট হয়ে যায়।’   

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মার্ক ডেসিরে
মার্ক ডেসিরে জানান, এমনও হয়েছে, টানা কয়েক বছর চলে গেছে কিন্তু ল্যাব একজনেরও পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। তবে তারপরও হাল ছাড়েন না ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। বার বার চালিয়ে যান প্রচেষ্টা। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে শনাক্তকৃত আরেক ব্যক্তির নাম তালিকায় যুক্ত করতে পেরেছে নিউ ইয়র্কের ফরেনসিক ল্যাব। তার নাম মাইকেল জনসন। তার বয়স ছিল ২৬ বছর। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ টাওয়ারের ৯০ তলায় অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

২০০১ সালে ফরেনসিক অফিসের তৎকালীন প্রধান চার্লস হির্শক তখনই বুঝতে পেরেছিলেন যে নিহতদের শনাক্তে অনেক সময় লেগে যাবে। আর তখনই তিনি দেহাবশেষগুলো সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এখন আর্জেন্টিনা থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ফরেনসিক দল নিউ ইয়র্কের এ দলটির কাছে প্রশিক্ষণ নিতে যায়।

মাঝে মাঝে নিহতদের স্বজনরা ল্যাবে যান। পরিচয় শনাক্তের ক্ষেত্রে স্বজনদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পরিবারের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা ডিএনএ নমুনার সঙ্গে দেহাবশেষ থেকে পাওয়া ডিএনএ মিলিয়েই নিহতদের পরিচয় মনাক্ত করা সম্ভব হয়। ফরেনসিক অফিসে প্রায় ১৭ হাজার নমুনা রয়েছে। তবে ১০০ নিহতের জন্য স্বজনের নমুনাও পাওয়া যায়নি।