রয়টার্সের সাংবাদিকদের কারাদণ্ডের পক্ষে সু চির সাফাই

মিয়ানমারে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকদের কারাদণ্ড নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা চলার মধ্যে প্রথমবার এই প্রসঙ্গে প্রথম মুখ খুলেছেন দেশটির ডিফ্যাক্টো সরকারের নেত্রী অং সান সু চি। তিনি বলেছেন, ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ও আইন ভেঙেছেন আর এর সঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কোনও সম্পর্ক নেই। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সু চির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মানবাধিকার গ্রুপ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, তিনি ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছেন।ভিয়েতনামে অর্থনৈতিক সম্মেলনে সু চি

গত বছর রাখাইনে সেনা অভিযানের সময় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার তথ্য সংগ্রহের সময় আটক রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গত ৩ সেপ্টেম্বর সাত বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করে মিয়ানমারের আদালত। গত মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্পষ্ট ও বিস্তৃত আইনে গ্রেফতার ও বিচার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকার স্বাধীন সাংবাদিকতাকে রুদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়েছে। রয়টার্সের দুই সাংবাদিকদের কারাদণ্ড দেওয়ার সমালোচনা করে তাদের মুক্তির দাবি করেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এত সমালোচনার মধ্যেও নীরবতা বজায় রেখে চলেছিলেন দেশটির নোবেল পুরস্কার জয়ী নেত্রী অং সান সু চি।

বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামে এক আন্তর্জাতিক অর্থনেতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময়ে প্রথমবার সাংবাদিকদের কারাদণ্ড নিয়ে মুখ খোলেন তিনি।  তাদের কারাদণ্ড দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, এই মামলা আইনের শাসনকে সমুন্নত করেছে। সমালোচকদের অনেকেই রায় পড়েননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, দুই সাংবাদিকের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অধিকার রয়েছে আর কেনও এই বিচার ভুল তা তুলে ধরারও অধিকার রয়েছে। অবশ্য রাখাইনে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট আরও ভালোভাবে সামাল দেওয়া যেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সু চির এই বক্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।  গ্রুপটির এশিয়া অঞ্চলবিষয়ক উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, তিনি বুঝতে ব্যথর্ হয়েছেন যে সত্যিকার আইনের শাসন বলতে আদালতে উপস্থাপিত প্রমাণকে সম্মান করা, যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তা পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করা ও আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রাখা এবং সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রভাব থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখাকে বোঝায়। আর এর সবগুলো পরিক্ষাতেউ রয়টার্সের সাংবাদিকদের কারাদণ্ড ঘোষণার বিচার উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

রাখাইনের ইন দীন গ্রামে দশ রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনা তদন্ত করার সময়ে আটক হন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। গত ৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের দায়ে তাদের সাত বছরের দণ্ড দেয় মিয়ানমার আদালত। তবে আদালতে শুনানির সময়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা তার দেওয়া সাক্ষ্যে বলেছিলেন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে কিছু নথি ধরিয়ে দিয়ে আটক করা হয়েছিল ওই সাংবাদিকদের। পরে তাকে বৈরি সাক্ষী ঘোষণা করে তাকে কারাদণ্ড দেয় মিয়ানমার আদালত।

প্রসঙ্গত, গত বছর রাখাইনে সেনা অভিযানের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল বলেছে, গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়েই মিয়ানমার সেনাবাহিনী ওই অভিযান চালিয়েছিল।