অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে ৯ বছরের শিশুর প্রতিবাদ

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতে আদিবাসী জনগণকে উপেক্ষা করার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছে সেদেশের ৯ বছর বয়সী এক শিশু। ‘প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ’র অভিযোগ এনে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় উঠে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সে। এরইমধ্যে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছে হারপার নিয়েলসন নামের ওই স্কুল শিক্ষার্থী। রাজনীতিকদের অভিযোগ, ওই শিশুর বাবা-মা তাদের সন্তানকে রাজনৈতিক গুটি হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে হারপারের সাহসিকতায় গর্বিত তার মা-বাবা। অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের অধিকারের সুরক্ষায় কাজ করা সংগঠনও তাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

হারপার নিয়েলসন
১৭০০ শতাব্দীর শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ায় উপনিবেশকরণ শুরু করে যুক্তরাজ্য। তবে সেখানে আদিবাসী সংস্কৃতির উপস্থিতি তার থেকেও লাখো বছর আগে। অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীরা সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত। সেখানে অন্য যেকোনও সম্প্রদায়ের চেয়ে আদিবাসীদের দারিদ্র্য, অপুষ্টি ও তাদের কারারুদ্ধ করার মাত্রা অনেক বেশি। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতে আদিবাসীদের উপেক্ষা করার অভিযোগ রয়েছে আগে থেকেই। গত বছর আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় সংগীতের নতুন একটি সংস্করণ করার দাবি উঠেছিল। আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগঠন রিকগনিশন ইন অ্যানথেম দাবি করে আসছে, জাতীয় সংগীতে ‘অস্ট্রেলীয়দেরকে কম বয়সী জাতি হিসেবে উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে সে অস্ট্রেলীয়দের অস্বীকার করা হচ্ছে, যাদের সঙ্গে ভূমির সংযোগ অল্প সময়ের নয়, বরং প্রাচীন।’ ১৮৭৮ সালে উপনিবেশিক কালে জাতীয় সংগীতের কথাগুলো লেখা হয়েছিল জানিয়ে এর সংস্কারের দাবি তুলেছিল তারা।

সে দাবিতে শামিল হয়েছে অস্ট্রেলিয়ারই একটি স্কুলের শিক্ষার্থী। ৯ বছর বয়সী হারপার নিয়েলসন সম্প্রতি স্কুলে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় সহপাঠীদের সঙ্গে উঠে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানায়। শিশু হারপার নিয়েলসনের অভিযোগ, অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের আগমন অনেক আগে থেকে হলেও জাতীয় সংগীতে তা স্বীকার করা হয় না, আধুনিক অস্ট্রেলিয়ান জাতি আদিবাসী জনগণকে উপেক্ষা করছে। বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের মধ্য দিয়ে খবরটি প্রকাশ্যে আসে।

প্রতীকী ছবি
হারপার নিয়েলসনের অভিযোগ, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতের শিরোনাম ‘অ্যাডভান্স অস্ট্রেলিয়া ফেয়ার’ এর মধ্য দিয়ে শুধু অস্ট্রেলিয়ার শ্বেতাঙ্গদের কথা বলা হয়েছে। আবার জাতীয় সংগীতে যখন গাওয়া হচ্ছে ‘উই আর ইয়াং’ তখন আধুনিক অস্ট্রেলীয়দের আগে থেকে বসবাসকারী আদিবাসীদেরকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম এবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব অভিযোগ করে ওই শিশু।

হারপার জানায়, জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত সে নিজে নিজেই নিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সে তার মা-বাবার সঙ্গে আলাপ করেছিল। হারপারের বাবা মার্ক নিয়েলসন এবিসিকে বলেন, ‘সে যা বিশ্বাস করে তা প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়ার সাহসিকতা ও দেখিয়েছে...তাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। হারপার সচেতনতা বাড়াতে চাচ্ছে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ নিয়ে জনগণকে ভাবতে শেখাচ্ছে।’

জাতীয় সংগীত নিয়ে হারপারের আচরণকে নিন্দনীয় বলে অভিহিত করেছেন অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিবিদ পাওলিন হ্যানসন। ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘এ শিশুর মগজধোলাই করা হচ্ছে, এবং আমি আপনাদের বলছি যে, তাকে আমি উচিত শিক্ষা দেব।’

হ্যানসনের মতো করে ক্ষোভ জানিয়েছেন কুইন্সল্যান্ড পার্লামেন্টের ছায়ামন্ত্রী ও মধ্য বামপন্থী লিবারেল ন্যাশনাল পার্টির সদস্য জ্যারড ব্লেইজি। হারপারের প্রতিবাদকে ‘তুচ্ছ’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। জ্যারডের দাবি, শিশুটির মা-বাবা তাকে ‘রাজনৈতিক গুটি হিসেবে ব্যবহার’ করছে। শিশু হারপারকে গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন জ্যারড।