ফেসবুকের পর ভিকে’তেও ব্লকড মিয়ানমারের সেনাপ্রধান

ফেসবুকের পর এবার রুশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিকে’তেও ব্লকড হলেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাং। রোহিঙ্গা সংকটের জন্য জাতিসংঘ দেশটির সেনাপ্রধানকে দায়ী করার পর গত ২৭ আগস্ট তাকে নিষিদ্ধ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ফেসবুকে নিষিদ্ধ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ভিকে-তে যুক্ত হন তিনি। তবে এবার ব্যবহারকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তার ‘ভিকে’ অ্যাকাউন্টটিও ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ব্লক করে দেওয়া অ্যাকাউন্টটিতে ১০ হাজার ফলোয়ার ছিল। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

Gen. Min Aung Hlaingভিকে’র পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা বার্মিজ ভাষার প্রোফাইলগুলো পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর সেজন্য বার্মিজ ভাষায় মডারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই মডারেশন টিম সেসব পোস্ট ডিলিট করে দেবে যা ভিকে’র নিয়ম পরিপন্থী।

সেনাপ্রধানের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অন্য অ্যাকাউন্টগুলো চালু রেখেছে ভিকে কর্তৃপক্ষ। অ্যাকাউন্টগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলেও এর কোনও উত্তর মেলেনি।

গত ২৭ আগস্ট মিয়ানমার সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাংকে নিষিদ্ধ করে ফেসবুক। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকটের জন্য তাকে দায়ী করার পর এমন ব্যবস্থা নেয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। সেনাপ্রধান ছাড়া আরও ২০ জন বার্মিজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করে তারা। এরপরই ভিকে’র আশ্রয় নেন বর্মি সেনাপ্রধান।

রাশিয়াভিত্তিক জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিকে’র ব্যবহারকারীরা বার্মিজ, রুশ, ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় পোস্ট দিতে পারে। এর ব্যবহার পদ্ধতি ফেসবুকের মতোই। ভিকে’র মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তথ্য বিনিময়, ছবি পোস্ট, পেজ তৈরি করতে পারে এবং দ্রুত ও বিনামূল্যে মেসেজ আদান-প্রদান করতে পারে। এ মাধ্যমটিতে নিবন্ধিত হতে ব্যবহারকারীদেরকে ইমেইল অ্যাড্রেস সরবরাহ করতে হয়। প্রতিষ্ঠানটির ৯ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে।

ফেসবুকে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের পেজটি ছিল ‘সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাং’ নামে। ভিকে’র অ্যাকাউন্টটিতেও একই নাম ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখানে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডের ছবি পোস্ট করা হয়েছিল।

গত বছরের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা চৌকিতে আরসার হামলাকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণ বলা হলেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এবং তাদের ফেরার সব পথ বন্ধ করতে আরসার হামলার আগে থেকেই পরিকল্পিত সেনা-অভিযান শুরু হয়েছিল। চলমান জাতিগত নিধনে হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ।

২৭ আগস্ট এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা গণহত্যায় সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার কথা তুলে ধরে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক কর্তৃপক্ষও এই গণহত্যায় ইন্ধন জুগিয়েছে। রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিও তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন। জাতিসংঘ জানায়, রাখাইনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ নিয়ে মিয়ানমার সরকারের প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকারের মাত্রায় তারা অবাক হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনটিতে। সেখানে ছয়জন সেনা কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে ছিলেন সেনাপ্রধানও।