ভারতে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে 'তিন তালাক'

লোকসভায় তিন তালাক নিষিদ্ধের বিল পাস হওয়ার পর এবার এ নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করলো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান, বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অধ্যাদেশ পাস হয়। এখন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর হলেই অধ্যাদেশটি আইনে রূপান্তরিত হবে। ‘তিন তালাক’ গণ্য হবে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে। লোকসভা নির্বাচনের আগমুহূর্তে এই অধ্যাদেশ জারির ঘটনাকে বিজেপি কর্তৃক মুসলিম নারীদের মন জয়ের চেষ্টা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

noname

গত বছর আগস্ট মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করেছিলেন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাসাপেক্ষে মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অব রাইটস অন ম্যারেজ) বিল ২০১৭ প্রণীত হয়। গত বর্ষা অধিবেশনেই লোকসভায় পেশ হওয়া সেই বিল পাস হয়। তবে বিরোধীরা বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তোলে। সঙ্গে আরও কিছু জটিলতায় শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভায় পেশ হয়নি এই বিল। তাই এবার অর্ডিন্যান্স জারি করে তিন তালাককে আইনি স্বীকৃতি দিলো কেন্দ্র।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতের ফেডারেল আইনমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন, আদালতের আদেশের পরও বাস্তবে তিন তালাক বন্ধ হয়ে যায়নি। সে কারণেই অবিলম্বে এই প্রথা আটকানোর জন্য অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত এই আইন কার্যকর হলে তিন তালাকের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। সেই সঙ্গে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের মতোই এক্ষেত্রেও অভিযুক্ত জামিন পাবেন না।

ভারতীয় মুসলিম সমাজ ১৯৩৭ সালে কার্যকর হওয়া মুসলিম পার্সোনাল আইন বা মুসলিম পারিবারিক আইন দ্বারা পরিচালিত। তবে তিন তালাকের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে পিটিশন ফাইল করেন পাঁচ নারী সায়ারা বানু, আফরিন রহমান, ইসরাত জাহান, গুলশান পারভিন ও ফারহা ফয়েজ। পিটিশনে বলা হয়, তিন তালাক মুসলিম মেয়েদের সমানাধিকারের পরিপন্থী। একে নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্নকারী একটা ব্যবস্থা বলেছেন তারা। ভারতীয় সংবিধানের ২৫(১) অনুচ্ছেদে নিজস্ব ধর্মাচরণ, ধর্মপ্রচারের যে অধিকার সুরক্ষিত আছে, তালাকের বিধান তার মধ্যে তা পড়ে না বলেও উল্লেখ করা হয় পিটিশনে।
গত মে মাসে মুসলিম নারীদের দায়ের করা পিটিশনগুলোর ওপর শুনানি করেন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন সংবিধান বেঞ্চ। গ্রীষ্মকালীন অবকাশে টানা ছয় দিনের ম্যারাথন শুনানি শেষে গত ১৮ মে এই মামলার রায় স্থগিত রেখেছিল প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। শুনানির সময় আদালত জানিয়েছিল, বহুগামিতার বিষয়টি এই মামলায় বিবেচনা করা নাও হতে পারে। মুসলিম ধর্মে তিন তালাক অবিচ্ছেদ্য মৌলিক অধিকার কিনা, শুধু এই বিষয়টিই খতিয়ে দেখা হয়। পিটিশনের পাশাপাশি ২০১৫-এর অক্টোবরে শীর্ষ আদালতেরই এক বেঞ্চের নির্দেশের ওপর আগস্টে রায় ঘোষণা করে তিন তালাক নিষিদ্ধ করা হয়।