জাতিসংঘ অধিবেশনের বিতর্কে ‘বহুপক্ষীয় নীতি’র পক্ষে সরব বিশ্বনেতারা

জাতিসংঘের ৭৩ তম সাধারণ অধিবেশনের প্রথম দিনে সংরক্ষণশীল রাষ্ট্রীয় নীতির তীব্র সমালোচনা হয়েছে। জোরালোভাবে হাজির হয়েছে বহুপক্ষীয় পররাষ্ট্রনীতির পক্ষের অবস্থান। মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের মহাসচিব, সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্টসহ বিশ্বনেতারা বহুপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। জানিয়েছেন, একাত্ম হওয়ার আহ্বান। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

জাতিসংঘের সাধারণ অদিবেশনের প্রথম দিন
মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ছিল জাতিসংঘের ৭৩-তম সাধারণ অধিবেশনের প্রথম দিন। এদিন বৈশ্বিকভাবে বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার সুরক্ষায় কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘সর্বজনীন পণ্যের অভিভাবক হিসেবে একটি সংস্কারকৃত, নতুন করে উজ্জীবিত এবং দৃঢ় বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করাটা আমাদের দায়িত্ব।’

সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট মারিয়া ফার্নান্দা এসপিনোসা টেকসই উন্নয়ন ও সবার জন্য সমতা নিশ্চিতে জোটবদ্ধভাবে ও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, ৭৩ বছর আগে জাতিসংঘের কাজ যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে। আমরা বৈশ্বিকভাবে যে সমস্যার মুখোমুখি আছি তা সমাধানের জন্য জোটবদ্ধতা সম্ভবত একমাত্র পথ। একে গুরুত্ব না দেওয়া কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে কেবল অস্থিতিশীলতা, ধন্দ, ও অনাস্থা তৈরি হবে এবং মেরুকরণ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কেউই মানুষের ভোগান্তির প্রতি নির্লিপ্ত হতে পারে না। যুদ্ধ, সংঘাত, অর্থনৈতিক সংকট ও পরিবেশগত অবক্ষয় আমাদের সবাইকে সমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’ এসপিনোসা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ব যখন আরও বেশি করে আন্তঃসংযোগকৃত হচ্ছে, তখন বৈশ্বিক সংলাপ ও বহুপক্ষীয় উদ্যোগের মধ্য দিয়ে এসব ইস্যুর অনেকগুলোই মোকাবিলা করা সম্ভব।’  

শুধু গুতেরেস ও এসপিনোসাই নন, জোটবদ্ধ ও একাত্ম হয়ে কাজ করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারাও। সুইস প্রেসিডেন্ট অ্যালাইন বেরসেট বলেন, ‘আমরা বহুপক্ষীয় ক্ষেত্রে একটি বাস্তব সংকট দেখছি। আমরা যখন ভবিষ্যত বৈশ্বিক সরকার-ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ নির্মাণের চেষ্টা করছি, তখনই এমনটা ঘটছে। জাতিসংঘের উপস্থিতি অনিবার্য এবং সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায়, বিশেষ করে অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’ বাণিজ্য সংরক্ষণশীলতার নীতির বিরোধিতা করে তিনি বলেছেন, এতে বাণিজ্য ও সমৃদ্ধি খর্ব হয়।

বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা হুমকির মুখে রয়েছে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন ফিনিশ প্রেসিডেন্ট সাওলি নিনিস্তো। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা বহুপক্ষীয় ব্যবস্থাকে সুবিধাজনক বিবেচনা করি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের এখন উদ্বেগে পড়তে হবে। আমরা একত্রিতভাবে যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি তা দৃশ্যত চাপের মধ্যে আছে। এর সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের সন্মুখীন। এ ব্যবস্থার সুরক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করাটা আমাদের সবার দায়িত্ব।’ সাওলি নিনিস্তো মনে করেন, বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকা সবচেয়ে জরুরি। তিনি বলেন, ‘বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার সুরক্ষার কাজ এখান থেকেই শুরু করতে হবে। একে অপরকে টেক্কা দিয়ে নয়, বরং জাতিসংঘ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করতে হবে।’

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাও দৃঢ়ভাবে বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার ধারণাকে হেয় করার সব ধরনের প্রচেষ্টা রুখে দিতে হবে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা রক্ষায় এটি জরুরি।’ মালাবির প্রেসিডেন্ট আর্থার পিটার মুথারিক ঘোষণা করেন, সব রাষ্ট্রই গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘে সবার গুরুত্ব সমান দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনও সংখ্যালঘু নেই, কোনও ছোট দেশ নেই। জাতিসংঘই একমাত্র পরিচয়।’