সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল: গুয়েতেমালার আদালতের রায়

মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়েতেমালার সেনাবাহিনী নিজ দেশের জনগণের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল বলে সর্বসম্মতিক্রমে রায় দিয়েছে দেশটির বিচারকেরা। তবে ২-১ ভোটে এই গণহত্যায় সাবেক গোয়েন্দা প্রধান জোস মরিসিও রদ্রিগেজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে আদালত। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে বুধবার দিনের শেষ দিকে দেওয়া ওই রায়ে বলা হয়েছে, গণহত্যায় রদ্রিগেজের সংশ্লিষ্টতার কোনও প্রমাণ নেই এমনকি দেশে কয়েক দশকব্যাপী চলা সশস্ত্র সংঘাতে কাউকে গণহত্যা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তারও প্রমাণ নেই।গুম হয়ে যাওয়া স্বজনদের এখনও খুঁজে ফেরেন মায়া আদিবাসীরা

কয়েক দশক চলা গুয়েতেমালার সংঘাত ১৯৬০ সালে শুরু হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯৬ সালে শেষ হয়। এই সংঘাতে দুই লাখ মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি গুম হয়ে যায় ৪৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। এসব ঘটনার শিকার ৮০ শতাংশ মানুষ ছিলেন মায়া আদিবাসী জনগণ। সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে গুয়েতেমালা সিটি থেকে ২২৫ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমের মায়া ইক্সিল অঞ্চলে।

মায়া উপজাতিদের প্রেসিডেন্ট মারিয়া ইউগেনিয়া ক্যাস্টেল্যানোস বলেন, বেসামরিক মানুষদের সঙ্গে অমানবিক কার্যক্রম সংগঠিত হয়েছিল।  বেঁচে যাওয়া হাজার হাজার মানুষ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ, শিশু চুরি, বোমা বর্ষণ, বাস্তুচ্যুত ও জোর করে দাসত্বে বাধ্য করার স্বাক্ষ্য দেওয়ার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমরা লড়ে গেছি।

অন্য অনেক ঘটনার পাশাপাশি ১৯৮২ সালের ২৩ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই ১৯৮৩ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ গুমের পাশাপাশি প্রায় ১৮০০ ইক্সিল বেসামরিক বাসিন্দাকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল। সাবেক স্বৈরশাসক এফরেইন রায়োস মন্ট ও সাবেক গোয়েন্দা প্রধান জোস মরিসিও রদ্রিগেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল।

রদ্রিগেজের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ে বিরুদ্ধ মত পোষণকারী বিচারক সারা ইয়োক বলেন, সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা অবশ্যই জানতেন যে সামরিক বাহিনী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। তার দায়িত্ব ছিল পর্যবেক্ষণ ও সব অঞ্চল থেকে সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্য তত্ত্বাবধান করা।  তিনি বলেন, আমার কাছে তিনি গণহত্যার জন্য দায়ী।

১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা রায়োস মন্টের বিরুদ্ধে পাঁচ বছর আগে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই সময়ে খালাস পেয়েছিনের রদ্রিগেজ।  তবে দেশটির সাংবিধানিক আদালত দ্রুত ওই রায় বদলে দিয়ে আরও অনেক বেশি মামলায় পুনরায় বিচার শুরু করে। গত অক্টোবরে শুরু হওয়া সেই বিচারের রায় বুধবার ঘোষণা করা হয়। ৯১ বছর বয়সী রায়োস মন্ট অসুস্থতাজনিত কারণে গত বছর মারা যান।

এসব অপরাধের সঙ্গে কোনও ধরণের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন রদ্রিগেজ। বুধবার রায় ঘোষণার আগে তিনি আদালতে বলেছিলেন, আমি নিশ্চিত যে আমি নির্দোষ। আমি এসব কাজ করিনি আর যেসব ঘটনা ঘটার কথা বলা হচ্ছে তা কাউকে করতে নির্দেশও দেয়নি।