রোহিঙ্গা বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য দেবেন তদন্ত দলের প্রধান

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অভিযান বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য দেবেন জাতিসংঘ তদন্ত দলের সভাপতি। তাকে সেখানে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ব্রিটেনসহ ৯টি সদস্য দেশ। তাই চীন ও রাশিয়ার বিপরীত অবস্থান থাকলেও নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য দেবেন তিনি। এই তদন্ত দলই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে গণহত্যার শামিল বলে অভিহিত করেছে।  কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

f-rohingyaun-a-20181018-870x580

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রোহিঙ্গা নিধনকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। তবে এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিষয়টির বিস্তারিত তুলে ধরা হলে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। 

কূটনীতিকরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতার মালিক চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া ঠেকাবে। তবে তারা নিরাপত্তা পরিষদের এই উদ্যোগ ঠেকাতে পারেননি। কারণ ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নূন্যতম ৯ সদস্য এই প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। তাই বিষয়টিতে ভেটো দেওয়া যাবে না। কূটনীতিকরা বলেছেন, চীন ও রাশিয়া মনে করে, এই প্রতিবেদন প্রথমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটির কাছে পাঠানো উচিত। ওই কমিটি মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করে থাকে। তবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, পোল্যান্ড, পেরু, কুয়েত, আইভরি কোস্ট ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে এক চিঠিতে এই আবেদন জানায়। ফলে এখন তদন্ত দলের প্রধান নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা করতে পারবেন।

জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক কর্তৃপক্ষও এই নিধনযজ্ঞে ইন্ধন জুগিয়েছে। রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিও তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন। রাখাইনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ নিয়ে মিয়ানমার সরকারের প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকারের মাত্রায় তারা অবাক হয়েছেন। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার উদ্দেশ্যে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এমন ঘৃণ্য অপরাধের নীলনকশা করার দায়ে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচ জেনারেলকে বিচারে আওতায় আনা উচিত। এবার ওই তদন্ত কমিটির প্রধানকেই হাজির করা হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদে। তিনি সবার সামনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

তবে মঙ্গলবার জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমার রাষ্ট্রদূত হাও দো সুয়ান নিরাপত্তা পরিষদকে লেখা একটি চিঠিতে এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘এটা রাখাইনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অবিশ্বাস ও মেরুকরণই শুধু বাড়াবে।’ তিনি লিখেছেন, ‘অন্যান্য ইতিবাচক উন্নয়ন বাদ দিয়ে সবার উপরে জবাবদিহিতাকে স্থান দেওয়া একটি বিপজ্জনক প্রচেষ্টা যা ভবিষ্যতে ব্যর্থ হতে পারে।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার চিন্তা করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বাণিজ্যিক জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইতোমধ্যে তারা বেশ কয়েকজন সেনা সদস্যের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারের চারজন সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত আগস্ট মাসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও সেনাবাহিনী পরিচালিত কমপক্ষে দুইটি ব্যবসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে দেশটি।

মিয়ানমারের কূটনীতিক সুয়ান নিরাপত্তা পরিষদকে লিখেছেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিবেচনা না করে একতরফা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বাহ্যিক চাপ বিদ্যমান স্বদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের সহযোগিতাকে নষ্ট করবে।’