এবার সুইজারল্যান্ডে নিষিদ্ধ মিয়ানমারের সাত সেনা কর্মকর্তা

রোহিঙ্গা নিপীড়নে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ান সেনাবাহিনীর সাত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার সম্পত্তি জব্দ করে তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সুইজারল্যান্ড। এর মাধ্যমে গত এপ্রিল এবং জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেওয়া পদক্ষেপের সঙ্গে নিজেদের শামিল করলো দেশটি। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি জানিয়েছে, বুধবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার কথা জানিয়েছে সুইজারল্যান্ড ফেডারেল কাউন্সিল।রোহিঙ্গা নিপীড়নের এবার সুইজারল্যান্ডে নিষিদ্ধ মিয়ানমারের সেনাকর্মকর্তা
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। ওই অভিযানের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে সাত লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা নিপীড়নের দায়ীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার পদক্ষেপও শুরু হয়েছে। এরমধ্যে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ছ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এবার তাতে সুইজারল্যান্ডও শামিল হলো।

সুইজারল্যান্ড ফেডারেল কাউন্সিল নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা সাত শীর্ষ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেনি। তবে ইরাবতির ধারণা গত জুনে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা সাত কর্মকর্তাকেই নিষিদ্ধ করেছেন তারা। ইইউ’র নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ওই সাত কর্মকর্তা হলেন, ডেপুটি মেজর জেনারেল, অং কিয়াও জাও, মেজর জেনারেল মং মং সোয়ে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান উ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খিন মং সোয়ে, বর্ডার গার্ড পুলিশের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরা সান লুইন ও অষ্টম সিকিউরিটি পুলিশের কমান্ডার থান্ট জিন উ। এসব সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর অভিযোগ করে থাকে ইইউ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করে থাকে।

সম্পত্তি জব্দ ওবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও সুইস নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হবে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত সরঞ্জাম, প্রযুক্তি এবং টেলিফোন ও ইন্টারনেটে নজরদারি চালাতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সফটওয়্যার। এছাড়া বিদ্যমান অস্ত্র ও সরঞ্জাম নিষেধাজ্ঞাও বহাল থাকবে।

সুইজারল্যান্ড ফেডারেল কাউন্সিলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমার সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো চলমান ব্যাপক, কাঠামোগত ও বিপুল মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানাচ্ছে ফেডারেল কাউন্সিল। মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হতে থাকা নিয়েও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন কাউন্সিল’।

২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা বিরোধী অভিযানে ‘মারাত্মক এবং কাঠামোবদ্ধ’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছে ইইউ। সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল কাউন্সিলের তরফে  মিয়ানমারের শান্তি, স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখবে তারা।

এদিকে মিয়ানমারের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আারোপের কথা ভাবছে ইইউ। রোহিঙ্গা নিপীড়নের দায়ে দেশটির গার্মেন্টস শিল্পকে লক্ষ্য করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। ওই শিল্পের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইইউ এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে মিয়ানমারের সাড়ে চার লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।