একদিনেই বছরের সমান বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যার কবলে কাতার

ভারী বর্ষণের কারণে আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে মরুরাষ্ট্র কাতার। শনিবার (২০ অক্টোবর) দেশটিতে একদিনেই প্রায় একবছরের সমান বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির পাশাপাশি ঝড়ের কারণে কারণে বেশিরভাগ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

doha_flood-afp-10_20_18 2 (1)

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ঊর্ধ্বতন আবহাওয়াবিদ স্টেফ গল্টার এক টুইটারে জানিয়েছেন, শনিবার রাজধানী দোহার একটি অংশে প্রায় এক বছরের সমপরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আবু হামর সড়কে এখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৯ দশমিক ৮ মিলিমিটার। যেখানে দোহার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণই ৭৭ মিলিমিটার।’ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬১ মিলিমিটারে (২ দশমিক ৪ ইঞ্চি) দাঁড়াবে বলেও ধারণা করেন তিনি।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, কাতারে এমন বৃষ্টিপাতের কারণে বেশিরভাগ রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। বিঘ্নিত হচ্ছে বিমান চলাচল। আকস্মিক বন্যায় ইতোমধ্যে অনেক বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। আর দোকানপাট ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম পেনিনসুলা জানিয়েছে, ঝড়ের কারণে চালক ও মোটর আরোহীদের দেখতে সমস্যা হতে পারে। এজন্য তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। এক চালক পেনিনসুলাকে বলেন, ‘তীব্র বৃষ্টি আর বাতাসের কারণে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি সামনের ভবনগুলোও ভালোভাব দেখা যাচ্ছে না। এজন্য  আমি ফিরে এসেছি।’

ঝড়ের কারণে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট ঘুরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে কাতার এয়ারওয়েজ। কূটনৈতিক অবরোধের কারণে প্রতিবেশি সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও বাহরাইনের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি না থাকায় ফ্লাইটগুলো ঘুরিয়ে দিতেও সমস্যা হয়েছে। কয়েকটি ফ্লাইটকে কুয়েত ও ইরানে পাঠিয়ে দিয়ে যাত্রীদের কাছে উদ্ভূত সমস্যা ব্যাখ্যা করা হয়। টুইটারে কাতার এয়ারওয়েজ লিখেছে, দোহার আবহাওয়াজনিত কারণে ফ্লাইট আসা-যাওয়ায় বিলম্ব হতে পারে।

কাতারের পাবলিক ওয়ার্কস কর্তৃপক্ষ চালকদের জন্য সতর্কতা জারি করে বন্যার কারণে তাদের সুড়ঙ্গ পথ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। কাতারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে, দোহায় বজ্রবৃষ্টির পর রাস্তায় থাকা গাড়িগুলো প্রায় সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। আরেকটি ফুটেজে দেখা গেছে, ভবনের ভেতরে সিড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানি সরানোর চেষ্টা করছেন কর্মীরা।

বন্যার কারণে কাতারের ন্যাশনাল লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষও লাইব্রেরি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। তারা জানিয়েছে, ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তা রবিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। দোহায় মার্কিন দূতাবাসও রবিবার তাদের কার্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বন্যার কারণে ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য শত কোটির টাকার অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পেও সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।