‘অক্ষত অবস্থায়’ প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো জাহাজের সন্ধান

প্রায় ২৪০০ বছর আগের গ্রিক ব্যবসায়ীদের একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ প্রায় অক্ষত অবস্থায় বুলগেরিয়ার উপকূলে কৃষ্ণ সাগরের তলদেশে পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ও বুলগেরিয়ার একটি যৌথ দল ২৩ মিটার (৭৫ ফুট) দীর্ঘ জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়। জাহাজের দিক নির্দেশক যন্ত্র (রাডার), বৈঠার হাতলসহ জাহাজে থাকা বিভিন্ন সামগ্রী প্রায় অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ধ্বংসাবশেষকেই বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো অক্ষত জাহাজ বলা হচ্ছে।পানির দুই হাজার মিটার নিচে পাওয়া গেছে দুই হাজার বছরের পুরনো জাহাজ
তিন বছর ধরে চালানো গবেষক দলটির অ্যাকাডেমিক অভিযানে রোমান বাণিজ্য জাহাজ ও ১৭শ শতকের কোসাক বাণিজ্য জাহাজসহ ৬৭টি ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। বুলগেরিয়ার বুরগাস শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে জাহাজটির সন্ধান পাওয়া যায়। সমুদ্র পৃষ্ঠের দুই হাজার মিটার নিচে থাকা জাহাজটির কাছে আধুনিক ডুবুরিদের পৌঁছানোও সম্ভব ছিল না। গবেষক দলটি পানির নিচে চালিত দুটি রোবটের সাহায্যে জাহাজটির একটি ত্রিমাত্রিক ছবি হাজির করতে পেরেছে। আর বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেট পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে।

প্রায় খ্রীষ্টপূর্ব ৪০০ শতকের বাণিজ্য জাহাজটি এত দীর্ঘ সময় পরেও অক্ষত থাকার কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন অক্সিজেন মুক্ত পানিতে থাকতে পারা। বাণিজ্য এই জলযানটির সঙ্গে জাহাজের নকশার সাদৃশ্য রয়েছে। প্রাচীন গ্রীসের পান পাত্র দিয়ে সজ্জিত অবস্থায় বাণিজ্য জাহাজটি খুঁজে পেয়ে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান গবেষকরা।

অভিযাত্রী দলের সদস্য হেলেন ফার বিবিসিকে বলেন, ‘এটা আরেকটা দুনিয়ার মতো। যখন রিমোট চালিত যান আরওভি পানির নিচ দিয়ে যেতে থাকবে আর পানির তলদেশে ফেলা আলোতে এই জাহাজটি এতো নিপুনভাবে ফুটে উঠতে দেখা যাবে তখন মনে হবে আপনি সেই সময়ে ফিরে গেছেন’। তিনি বলেন, ‘এটা সংরক্ষিত ও নিরাপদ। এটা ক্ষয়ে যায়নি আর শিকারিদের আকৃষ্ট করেনি বলে মনে হয়’।

ব্রিটিশ জাদুঘরে থাকা সাইরেন ভেস নামে পরিচিত গ্রীক পাত্রের ওপর করা নকশার মতো একই বৈশিষ্ট্য জাহাজটিতে দেখা গেছে। প্রায় ৪৮০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের জাহাজটিতে গ্রীক রাজা ওডিসেসাসের নকশা রয়েছে। গ্রীক মিথলজি অনুযায়ী তার জাহাজ তিনটি পৌরাণিক সমুদ্রে পাড়ি দেয়। গ্রীক দেবতা নিম্ফসের বাজানো বাঁশির সুর ওডিসেসাসের নাবিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় বলে ধারণা করা হয়।

জাহাজটিতে থাকা মালামাল সম্পর্কে এখনও জানতে পারেননি গবেষকরা। গবেষক দলটি বলছে জাহাজটি তুলে আনতে আরও প্রচুর অর্থায়ন প্রয়োজন। ড. হেলেন ফার বলেন, ‘সাধারণভাবে আমরা পান পাত্র অ্যামফোয়ার পেয়েছি আর ধারণা করতে পারি এগুলো কোথা থেকে এসেছে। কিন্তু এগুলোসহ আরও অনেক কিছুই জানার বাকি। প্রত্নতত্ত্ববিদ হিসেবে আমরা এই জাহাজ থেকে প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও ওই এলাকার গতিবিধি দেখতে আগ্রহী’।