তথ্য সুরক্ষায় ব্যর্থতার দায়ে যুক্তরাজ্যে ফেসবুকের জরিমানা

তথ্য সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে জনপ্রিয় ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে জরিমানা করেছে যুক্তরাজ্য। চলতি বছরের শুরুতে সাড়া ফেলা ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির ঘটনায় বৃহস্পতিবার ফেসবুককে পাঁচ লাখ পাউন্ড জরিমানা করে যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশনারের কার্যালয় (আইসিও)। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। গত জুলাইতে প্রাথমিকভাবে এই জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বৃহস্পতিবার তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এই জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে ফেসবুক। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আইসিওর সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে দেখছে তারা।noname
আইসিও বলছে, তাদের তদন্তকারীরা দেখেছে ২০০৭ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে ডেভেলপারদের তাতে প্রবেশাধিকার দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের যথাযথভাবে এবং পরিষ্কারভাবে জানানো হয়নি।

যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশনার এলিজাবেথ ডেনহাম বলেন, বেআইনি এই তথ্য প্রক্রিয়ার আগে, চলার সময়ে বা পরেও ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে ফেসবুক।

১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যে প্রনীত হয় তথ্য সুরক্ষা আইনে ফেসবুককে এই জরিমানা করা হয়েছে। ওই আইনে তাদের এখতিয়ারে থাকা সর্বোচ্চ জরিমানই করা হয়েছে ফেসবুককে। ২০১৮ সালে মে মাসে এই আইনে পরিবর্তন আনা হয়। এই আইনের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাধারণ আইনও রয়েছে। এসব আইনের মাধ্যমে এখন আইসিও ১ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড বা বৈশ্বিক লেনদেনের চার শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে।

ডেনহাম বলেন, প্রায়োগিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অন্যতম চালিকা শক্তি হলো মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবস্থাপনায় যেন অর্থবহ পরিবর্তন আনে। তিনি বলেন, আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। এখনও অনেক বড় প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি। এখনও আলোচনার বাকি রয়েছে কিভাবে প্রযুক্তি ও গণতন্ত্র পরস্পর মিথস্ক্রিয়া করবে। সমাজভিত্তিক এর আইনি, নীতিগত এবং নিয়ন্ত্রণকারী ফ্রেমওয়ার্ক কি হবে তারও আলোচনা বাকি তেকে গেছে।

আইসিও বলেছ, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ফেসবুক। কারণ তারা অ্যাপ এ যথাযথ পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এমনকি ডেভেলপারদের এই প্লাটফর্ম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও যথাযথ পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এই ব্যর্থতার কারণে ড. আলেকজান্ডার কোজান নামের এক ডেভেলপার ও জিএসআর নামে তার এক কোম্পানি সারা বিশ্বের প্রায় আট কোটি ৭০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর অজান্তে তাদের তথ্য ব্যবহার করেছে। এসব তথ্যের কিছু অংশ পরে এসসিএল নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়া হয়। এই এসসিএল হলো ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার প্যারেন্ট কোম্পানি। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা এসব তথ্য যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যবহার করেছে।

২০১৫ সালে তথ্য অপব্যবহারের খবর সামনে আসার পরও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এসসিএল গ্রুপের ক্ষেত্রে ২০১৮ সাল পর্যন্তও তাদের নিজেদের প্লাটফর্ম থেকে সরায়নি ফেসবুক।

আইসিওর তদন্তে দেখা গেছে অপব্যবহার হওয়া তথ্যের মধ্যে প্রায় দশ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকের তথ্যও রয়েছে।

ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির জের ধরে চলতি বছরের মে মাসে বন্ধ হয়ে যায় ব্রিটেনের আচরণত গবেষণা ও কৌশলগত প্রতিষ্ঠান এসসিএল। এই গ্রুপের কার্যক্রম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। আইসিও এখনও তদন্ত করে দেখছে প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করেছে।