যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতায় লাগাম টেনে ধরতে রিয়াদে পৌঁছেছেন বাদশাহর একমাত্র জীবিত আপন ভাই রাজপুত্র আহমাদ বিন আবদুলঅাজিজ। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচক হিসেবে পরিচিত লন্ডনে বসবাস করা এই প্রভাবশালী রাজপুত্র মঙ্গলবার রিয়াদে পৌঁছেছেন। লন্ডনভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আই জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই রিয়াদ যান ৭০-এর কোঠায় থাকা এই রাজপুত্র। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাপের মুখে থাকা যুবরাজের ক্ষমতায় লাগাম টানতেই সৌদি ফিরেছেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন যুবরাজ।
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুলআজিজের নিজের ছোট ভাই আহমাদ বিন আবদুলআজিজ। রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্যদের মধ্যে অন্যতম তিনি। বাদশাহর ভাই হিসেবে তার অবস্থানের কারণে দেশটিতে তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার পর ২০১২ সালে স্বল্প সময়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ওই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর থেকেই মূলত লন্ডনে বসবাস করেন। গত সেপ্টেম্বরে ইয়েমেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে যুবরাজের ক্ষমতার সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন তিনি।
আহমাদ বিন আবদুলআজিজের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র মিডলইস্ট আইকে বলেছেন, ‘তিনি এবং রাজপরিবারের অনেকেই বুঝতে পেরেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) বিষাক্ত হয়ে গেছেন। রাজপুত্র এই পরিবর্তনে এখন নিজের ভূমিকা রাখতে চান। তার মানে হলো নতুন কোনও আয়োজনে তিনি নিজেই বড় কোনও ভূমিকা রাখবেন অথবা এমবিএস’র বিকল্প খুঁজে বের করতে সাহায্য করবেন’। ওই সূত্রটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় নিজের ক্ষতি না হওয়ার নিশ্চয়তা পেয়ে রিয়াদে গেছেন তিনি। এসব দেশের কর্মকর্তারা তাকে পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করেছেন।
পশ্চিমা দেশের নিশ্চয়তা ছাড়াও নিজের পদমর্যাদাতেও রিয়াদে সুরক্ষা পাবেন আহমাদ বিন আবদুলআজিজ। গত বছরের নভেম্বরে যুবরাজের নেতৃত্বে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালানো হলেও আধুনিক সৌদির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক বাদশাহ আবদুলআজিজের কোনও পুত্রকে স্পর্শ করতে পারেনি তারা।
২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আশঙ্কা রয়েছে তাকে ওই পদ থেকে সরিয়েও দেওয়াও হতে পারে।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের গালফ স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক মাহজুব জায়েইরি বলেছেন, আহমাদ বিন আবদুলঅাজিজের রিয়াদে পৌঁছানোতে সৌদি শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় দ্রুত পরিবর্তন আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, এই অঞ্চল ও সৌদি আরবের অভ্যন্তরে মোহাম্মদ বিন সালমানের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। সৌদি আরবের অভ্যন্তরেও এমন চাপ রয়েছে যে, যা ঘটছে তা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নয়’।
প্রসঙ্গত, আধুনিক সৌদি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক বাদশাহ আবদুল আজিজ। তার প্রিয় স্ত্রী ছিলেন হুসা বিন আহমেদ আল সুদাইরি। এই স্ত্রীর সাত সন্তানকে নিয়ে সৌদি ক্ষমতার অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছিল ‘সেভেন সুদাইরি’ নামে প্রভাবশালী বলয়। সিংহাসনের উত্তরাধিকার ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের। এমনকি তাদের অন্য রাজপুত্রদের নাগালেরও বাইরে রাখা হতো। বর্তমানে ওই বলয়ভুক্তদের মধ্যে সৌদি বাদশাহ ছাড়া শুধু বেঁচে আছেন আহমাদ বিন আবদুলআজিজ।