যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের কাছে 'খাশোগি হত্যার অডিও আলামত' সরবরাহ তুরস্কের

সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সকে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত অডিও রেকর্ডিং’র অনুলিপি সরবরাহ করেছে তুরস্ক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার শত বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার (১১ নভেম্বর) ফ্রান্স সফরের আগে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান সাংবাদিকদের এই কথা বলেন। তিনি আবারও বলেছেন যে, খাশোগিকে কে হত্যা করেছে তা আগে থেকেই জানতো সৌদি আরব।

a40757c203ec49a1abfa7178c24ad0b4_18

এরদোয়ান বলেন, ১৫ সদস্যের দলের মধ্যে নির্দিষ্টভাবে কে জামাল খাশোগিকে হত্যা করেছে তা সৌদি আরবের জানা। ২ অক্টোবর হত্যাকাণ্ডের একদিন আগে তারা তুরস্ক পৌঁছেছিল। তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠান চলাকালে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। তিনি বলেন, প্যারিসে যাওয়ার পর আমরা একটা সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করবো আর এজন্য আমরা একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের চিন্তা করবো।

২ অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন সৌদি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি। কনস্যুলেট ভবনে তার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার কথা স্বীকার করলেও এর সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান কিংবা অন্য কোনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে আসছে দেশটি। তবে সৌদি আরবের এমন দাবি মানছে না তুরস্কসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় অংশ। ইউরোপীয় দেশগুলো এ ইস্যুতে রিয়াদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হন।

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার প্রমাণ সম্বলিত অডিও রেকর্ড ও যাবতীয় তথ্য তুরস্কের নিজস্ব তদন্তে পাওয়া। এর আগে এসব রেকর্ড অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানিয়েছিলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসলোগু। তবে এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই রেকর্ডিং হস্তান্তরের কথা জানালো দেশটি।

briefing-ott-news-1-18107_747330e7e14a7b733b1061e03f2276b4.fit-760w

তুর্কি তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, খাশোগির হাতে সর্বাধুনিক ‘অ্যাপেল ওয়াচ’ ছিল। আর এ ওয়াচের মাধ্যমে সৌদি কনস্যুলেটে তাকে নির্যাতন এবং হত্যার মুহূর্তের অডিও রেকর্ড তার ফোন এবং আইক্লাউডে পৌঁছে গিয়েছিল। এই ফোন ও আইক্লাউড তিনি কনস্যুলেটের বাইরে অপেক্ষমান তার বাগদত্তার কাছে রেখে গিয়েছিলেন। এখন এসব রেকর্ড তার বাগদত্তার হাত থেকে তুর্কি তদন্তকারীদের কাছে পৌঁছেছে। শুরু থেকেই খাশোগিকে হত্যার একটি অডিও প্রমাণ হাতে থাকার দাবি করে আসছে তুরস্ক।

ওই অডিও রেকর্ডিং পুরোপুরি শুনেছেন এমন এক তুর্কি সূত্র মিডলইস্ট আইয়ের কাছে দাবি করেন, ২ অক্টোবর মাত্র সাত মিনিটে পুরো হত্যাকাণ্ড সম্পাদিত হয়েছে। ওই সূত্র দাবি করেছে, খাশোগিকে হত্যার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের জেনারেল সিকিউরিটি বিভাগের ফরেনসিক প্রমাণ সংক্রান্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সালাহ মোহাম্মদ আল তুবাইগিসহ ১৫ জনের একটি দল প্রাইভেট জেটে করে ওইদিন সকালে আঙ্কারা পৌঁছান। দূতাবাসের কনসাল জেনারেলের অফিস থেকে খাশোগিকে টেনেহিঁচড়ে কনসাল জেনারেলের পড়ার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় উপরে প্রচণ্ড চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সেখানে নিচতলায় উপস্থিত থাকা এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর তার চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, তাকে চেতনানাশক কিছু দেওয়া হয়েছিল।

সূত্র দাবি করেছে, খাশোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের কোনও আলামত দেখা যায়নি। তাকে হত্যা করতেই স্কোয়াডটি এসেছিল। স্টাডি রুমের টেবিলে ওপর শুইয়ে খাশোগিকে জীবিত অবস্থায় কেটে টুকরো টুকরো করেন তুবাইগি। পুরো হত্যাকাণ্ডটি ঘটাতে সময় লেগেছে মাত্র সাত মিনিট।

তুবাইগি যখন খাশোগিকে কাটতে শুরু করেন তখন তিনি ইয়ারফোনে উচ্চস্বরে গান শুনছিলেন। এছাড়া এ সময় তিনি তার সহকর্মীদেরও গান শুনতে উৎসাহ দেন। ওই রেকর্ডে তুবাইগিকে বলতে শোনা গেছে, ‘যখন আমি এ কাজ করি তখন গান শুনি। আপনাদেরও এটা করা উচিত।’

তুর্কি সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা শনিবার জানিয়েছে, জামাল খাশোগির লাশ উদ্ধারের চেষ্টা বাদ দিয়েছে তুর্কি পুলিশ। তবে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের অপরাধ তদন্ত অব্যাহত থাকবে। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা।