ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আগের চেয়ে বেশি দমনমূলক: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সোমবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর একটি আঘাত। এমনকি এটা আগের আইনের চেয়েও বেশি ‘দমনমূলক’ বলে অভিহিত করেছে সংগঠনটি।

Amnesty-International-AI-

‘মুজলিং ডিসসেন্ট অনলাইন’ বা ‘অনলাইনের ভিন্নমত দমন’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে সংগঠনটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, নতুন আইনের অস্পষ্ট ও সামগ্রিকভাবে বিস্তৃত ধারাগুলো সাংবাদিক ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের ভয় দেখানো বা বন্দি করা, ভিন্নমত দমন ও আক্রমণাত্মক নজরদারির কাজে ব্যবহার করা হতে পারে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সহকারী দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক দিনুশিকা দিসানায়েকে বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তি আইন ব্যবহার করে বাংলাদেশে ১২শ’র বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অতীতের ধারা অব্যাহত থাকলে নতুন কঠোর আইন আরও বেশি দমনমূলক হবে’। তিনি বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অনেক উপায়কেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এছাড়া ভিন্নমত পোষণের অনেক বৈধ উপায়ের জন্য বিশাল জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক আইন ও মানের পরিপন্থী। অবিলম্বে এই আইন প্রত্যাহার করা উচিত।’

বাংলাদেশ সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়ার পরই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে তথ্য প্রযুক্তি আইনের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দাবি করেছে, নতুন আইনে অনেক বিষয়ের সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা ও ব্যতিক্রম সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এর মধ্যে ১৪টি অপরাধের জন্য জামিন অযোগ্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, ‘‘আইনের ২১ নম্বর ধারায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত অথবা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনও ‘মিথ্যাচার’ বা প্রচারভিযানের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিশাল অংকের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।’’

অ্যামনেস্টি বলেছে, ওই আইনের ২৫ নম্বর ধারায় রাষ্ট্রকে বিশেষ সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে যা বৈধ রাজনৈতিক মতপ্রকাশকে নিষিদ্ধ করতে করতে বা শাস্তি দিতে ব্যবহার করা হতে পারে। ২৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা  অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কোনও তথ্য প্রকাশ বা প্রচারকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এছাড়া এই আইনে সরকারের ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থাকে চরম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনও ব্যক্তির কর্মকাণ্ডকে ক্ষতিকর বা হুমকি মনে করলে তারা যে কাউকে তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। এমনকি এই সংস্থা চাইলেই ইন্টারনেট থেকে যেকোনও তথ্য বা উপাত্ত বন্ধ করে রাখা বা সরিয়ে ফেলার জন্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে নির্দেশ দিতে পারবে।

নতুন আইনের আওতায় যদি পুলিশ মনে করে, কোনও ব্যক্তি ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে কোনও অপরাধ করতে পারে, তাহলে কোনও পরোয়ানা ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করতে পারবে।

দিশানায়েকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে রাষ্ট্রের পদক্ষেপের নিরীক্ষা ও বিপরীত পদক্ষেপ গ্রহণের বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনা প্রক্রিয়া না থাকায়  ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থার বিবেচনা ব্যাপক ও নির্বিচার বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ যদি মনে করে যে, তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে আর রাষ্ট্র তাদের মতামতকে অন্যায্যভাবে বন্ধ করে রাখছে, তাহলে সরকারকে অবশ্যই তাদের জন্য যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’