রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পেছানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন মার্কিন সিনেটরের

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে পূর্বের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন এক শীর্ষ মার্কিন সিনেটর। সিনেটর এড মার্কি বলেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।’

উখিয়ার বালুখালী এলাকায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসতি। ছবি: বাংলা ট্রিবিউন

গত ৩০ অক্টোবর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) সিদ্ধান্ত অনুসারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনও রোহিঙ্গাই ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি বলে জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে ৩০ পরিবারের ১৫০ জনের প্রত্যাবাসনের কথা জানানো হলেও পরে তা হয়নি।

তবে এই স্থগিত করাই যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে এড মার্কি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে প্রত্যাবাসানের ক্ষেত্রে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসরণ করতে হবে এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে কাজ করে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পার্সন্স ফ্রম রাখাইন স্টেট’ নামে  বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। পরে গত ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এদিকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির প্রশাসক মার্ক গ্রিন বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে আশ্রয় শিবিরে স্কুল করা সম্ভব নয় কারণ রোহিঙ্গারা অস্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু তারপরও তো তাদের শিক্ষা প্রয়োজন।’

মার্ক বলেন, ‘আমরা তাই শিক্ষা  সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যেন কোনও একদিন হয়তো শিশুরা ভালোভাবে দেশে ফিরতে পারে।’

টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস কমিশনের আয়োজনে ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ও মানবাধিকার’ বিষয়ক কংগ্রেসের এক শুনানিতে ওয়ার্ল্ড ভিশন ইউএস এর শিশু সুরক্ষা ও শিক্ষা বিষয়ক প্রকল্প ব্যবস্থাপাক লরা ব্রামন কমিশনকে বলেন, অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আবার ফেরত পাঠানো শরণার্থীদের মৌলিক সুরক্ষা নীতির লঙ্ঘন।

এছাড়া আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশনের নীতি বিশ্লেষক ওয়ারিস হোসেন বলেন, বৈশ্বিকভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা খুবই জরুরি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করতেই হয়।

তিনি বলেন, ‘গতবছর রোহিঙ্গা শিবির পরির্দশনের সময় আমি আরও কিছু পর্দার আড়ালের নায়কদের দেখেছি। তারা হলো কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ, যারা রোহিঙ্গাদের জন্য নিজেদের দরজা খুলেছেন। আমলে নেননি নিজেদের ব্যক্তিগত ক্ষতি কিংবা ব্যয়। ’