খাশোগির হত্যাকাণ্ডের কোনও বিষয় আড়াল না করতে সম্মত এরদোয়ান-ট্রাম্প

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয় কোনও কিছু আড়াল না করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার এক ফোনালাপে এই দুই নেতা এ বিষয়ে একমত হন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট দফতরের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে কাতারি সংবাদমাধ্যম গালফ টাইমস এ খবর জানিয়েছে।

5befb79ec9de3d31a47b14b8

সূত্রটিকে উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়, ‘উভয় নেতাই জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সব দিক আলোকপাত করতে ও ঘটনার কোনও বিষয় গোপন করতে না দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন’।

বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল সৌদ আল মোজেব রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়েছেন। এই পাঁচজনই খাশোগিকে ওষুধ প্রয়োগ ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে এর সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জড়িত থাকার বিষয়টি নাকচ করে দেন তিনি।

সৌদি অ্যাটর্নি জেনারেল দাবি করেন, গত ২ অক্টোবর ইনজেকশন প্রয়োগের পর ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে খাশোগিকে খুন করা হয়। পরে তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে কনস্যুলেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।  সৌদি অ্যাটর্নি জেনারেলের বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্ক ও সৌদি আরবের যৌথ তদন্ত দলের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ও পাবলিক প্রসিকিউটরের তদন্তে দেখা গেছে, সৌদি নাগরিক জামাল খাশোগি হত্যায় সন্দেহভাজনের সংখ্যা ২১।

সৌদ আল মোজেব জানান, ১১ জনকে চিহ্নিত করে তাদের আদালতের মুখোমুখি করা হয়েছে। এছাড়া অন্য সন্দেহভাজনদের বিষয়ে অপরাধে তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আরও তদন্ত চালানো হচ্ছে। আর হত্যার নির্দেশ ও অপরাধ সংঘটনে জড়িত পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে বলে জানান সৌদি অ্যাটর্নি জেনারেল।

বিয়ের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তানবুল কনস্যুলেটে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা এবং সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে খাশোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করে সৌদি আরব জানায়, ইস্তানবুলের কনস্যুলেটে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে খুন হন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৮ জনকে আটক ও ৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের কথা জানায় সৌদি আরব। তবে গত মাসে আঙ্কারার পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, তুরস্কের তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদের আগেই সন্দেহভাজনদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারে সৌদি আরব।

এদিকে শুক্রবার ইস্তানবুলে খাশোগির গায়েবানা জানাজায় অনেক তুর্কি নাগরিক অংশ নেন। খাশোগির লাশ না পেলেও শহরটির ফেইথ মসজিদে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।  নবগঠিত জামাল খাশোগির বন্ধু সংস্থা নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা এতে অংশ নেন।

বৃষ্টির মধ্যেই এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তুর্কি-আরব মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ফেইথ ওকি বলেন, ‘আমরা ধরে নিয়েছি আর কখনওই লাশ ফেরত পাবো না। এজন্যই আমরা এই জানাজার আয়োজন করেছি।’ জামাল খাশোগি এই সংগঠনের একজন সদস্য ছিলেন।

জানাজায় অংশ নেওয়া ইস্তানবুলের বাসিন্দা ইব্রাহিম পেকদেমির বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে আর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে-বিশ্বকে এমন বার্তা দিতেই এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।