ব্রেক্সিট পরবর্তী যুক্তরাজ্যে ন্যায্য অভিবাসনের প্রতিশ্রুতি মে’র

ব্রেক্সিট পরবর্তী যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ এবং এই জোটের বাইরে থাকা বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে যাওয়া অভিবাসীরা কাজের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাবেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সোমবার কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রির বার্ষিক সম্মেলনে এই প্রতিশ্রুতি দিন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের বেক্সিট পরবর্তী অভিবাসন ব্যবস্থা হবে দক্ষতা ও মেধাভিত্তিক। সেক্ষেত্রে এসব অভিবাসী কোন দেশ থেকে এসেছেন তা বিবেচনা করা হবে না।

maxresdefault

থেরেসা মে বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে একবার বের হতে পারলে কারা এখানে আসবে তার পুরো নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাছে থাকবে। তখন ইউরোপীয় নাগরিকরা দক্ষতা-অভিজ্ঞতা নির্বিশেষে সিডনি থেকে আসা প্রকৌশলী বা দিল্লি থেকে আসা সফটওয়্যার ডেভেলপার থেকে এগিয়ে থাকবে না’। তিনি আরও বলেন, ‘কোন দেশ থেকে এসেছেন সেই ব্যবস্থার পরিবর্তে একজন ব্যক্তি কতখানি মেধা ও দক্ষতা দেখাতে পারবেন তা বিবেচনার জন্য নতুন ব্যবস্থা চালু করা হবে’। তিনি বলেন, বেক্সিট পরবর্তী অভিবাসন ব্যবস্থা ‘কোটাভিত্তিক’ এর পরিবর্তে ‘দক্ষতাভিত্তিক’ হবে।

বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চলাচলের স্বাধীনতা আইনের আওতায় এই অর্থনৈতিক জোটের মধ্যকার অভিবাসী শ্রমিকরা মুক্তভাবে যুক্তরাজ্যে আসতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেমের মতো ইইউ’র বাইরের দেশগুলোর শ্রমিকদের জন্য কঠোর ভিসি আবেদনের দরকার পড়ে। যুক্তরাজ্য সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে যে, যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেলে সব দেশের নাগরিকদের জন্য একই ভিসা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এটা যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের তরকারি শিল্পের জন্য একটি সুখবর। কারণ এই শিল্পটি দক্ষিণ এশীয় তরকারি রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাসম্পন্ন বাবুর্চি পাচ্ছে না। নতুন পদ্ধতিতে বাংলাদেশিরা সেখানে এখকার চেয়ে বেশি সুযোগ পাবেন।

থেরেসা মে এমন সময় এই বক্তব্য দিলেন যখন তার নিজের কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা তাকে দলের প্রধানের পদ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে  সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জন্য প্রয়োজনীয় ৪৮ জন এমপি’র চিঠি বিষয়ে কোনও পরিষ্কার খবর জানা যায়নি। তবে এই সপ্তাহের মধ্যে এমন একটি সিদ্ধান্তের ব্যাপারে গুঞ্জন রয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে স্বাক্ষর করার জন্য থেরেসা মে’র প্রস্তাবিত ৫৮৫ পৃষ্ঠার খসড়া চুক্তি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ওই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য ওই দিন ব্রাসেলসে একটি বিশেষ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হবে। 

গত সপ্তাহে থেরেসা মে’র মন্ত্রিপরিষদ থেকে ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডোমিনিক রাবসহ কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। তা সত্বেও সোমবারের বক্তব্যে মে বলেছেন, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ওই চুক্তি নিয়েই অগ্রসর হবেন। আগামী সপ্তাহে ব্রাসেলস সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রেক্সিট পরবর্তী সম্পর্ক বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

সোমবারের বক্তব্যে প্রত্যাহার চুক্তি নিয়ে ব্রাসেলসের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা শুরু করার ব্যাপারে অনাগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন মে। তিনি বলেন, ‘ওই চুক্তির মুল বিষয়গুলো ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে’। তিনি এই সপ্তাহে ব্রাসেলসে একটি ভবিষ্যত বাণিজ্য সম্পর্ক বিষয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। রবিবারের চুক্তি স্বাক্ষরের আগেই তা করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

মে বলেন, এটা কখনওই সহজ বা সোজাসাপ্টা হবে না। চূড়ান্তপর্ব সবসময়ই সবচেয়ে কঠিন হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা এমন একটি চুক্তি নিয়ে কাজ করছি যা যুক্তরাজ্যের জন্য কাজ করবে। আর এ নিয়ে কাউকেই সন্দিহান রাখতে চাই না। আমি এটা সবাইকে জানাতে বদ্ধপরিকর।