ইসলাম বিদ্বেষের নতুন সংজ্ঞা চান ব্রিটিশ এমপিরা

‘ইসলামোফোবিয়া’ বা ‘ইসলাম বিদ্বেষে’র নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সর্বদলীয় মুসলিম এমপিদের সংগঠন। মঙ্গলবার ব্রিটিশ মুসলিমদের দ্য অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ-এপিপিজি এই আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এতে দেশটিতে ক্রমবর্ধমান মুসলিমবিরোধী কুসংস্কারের সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হবে।

130625-islamophobia

বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত লেবারপার্টির এমপি রুপা হক এপিপিজি’র একজন সক্রিয় সদস্য। ৬ মাস ধরে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন, পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রমাণ সংগ্রহের পর একটি তদন্ত শেষ করেছে এপিপিজি। এরপর মঙ্গলবার সংগঠনটি ‘ইসলাম বিদ্বেষ সংজ্ঞা’ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে ইসলাম বিদ্বেষের নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘বর্ণবাদ থেকে ইসলাম বিদ্বেষের উৎপত্তি আর এটাও এক ধরনের বর্ণবাদ যাতে মুসলিমদের মতামত ও অনুভূতিকে লক্ষ্য করা হয়।’ গত মাসে প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব মতে, ধর্মীয় ‘হেট ক্রাইমে’র বেশিরভাগই মুসলিমদের বিরুদ্ধে হয়ে থাকে। যা মোট ঘটনার ৫২ শতাংশ।

এপিপিজি’র সহ-সভাপতি ও লেবার পার্টির এমপি ওয়েস স্ট্রিং বলেন, ইসলাম বিদ্বেষ এক ধরনের বর্ণবাদ আর এটা আমাদের সমাজে বাড়ছে। এটাকে মোকাবিলা করার জন্য ইসলাম বিদ্বেষকে অবশ্যই সঠিক ও পূর্ণ সংজ্ঞায়িত করতে হবে। এ কারণেই এই তদন্ত মূলত কার্যকর সংজ্ঞা নির্ধারণের আলোচনাকে কেন্দ্র করেই করা হয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলাম বিদ্বেষ সমাজে বিভাজন, হেট ক্রাইম এমনকি সন্ত্রাসী হামলাও বাড়াচ্ছে। কারণ এটার কোনও সর্বসম্মত সংজ্ঞা নেই। এটা সমাজে ভয়ঙ্কর প্রভাব বাড়াচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসলাম বিদ্বেষ স্পষ্ট থেকে সুক্ষ্মমাত্রায় পরিবর্তিত হওয়াসহ অন্যান্য সব কাজের সংজ্ঞায়ন থাকা দরকার যাতে কেউ এটা করলে তাকে গ্রেফতার বা প্রতিহত করা যায়। মূলত অনেক আচরণ এতটাই স্বাভাবিক করে ফেলা হয়েছে যে, মানুষ জানেই না তা ইসলাম বিদ্বেষের মধ্যে পড়তে পারে। ব্রিটিশ মুসলিমদের ওপর এই সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে স্বীকার করলেও সরকার কখনওই ইসলাম বিদ্বেষের সংজ্ঞা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়নি।

চরম ডানপন্থী ও চরমপন্থী সংগঠনগুলোর সমালোচনা ঠেকানোর জন্য এপিপিজি তাদের প্রতিবেদনের উপসংহারে বলেছে, এই সংজ্ঞায়ন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা ধর্ম হিসেবে ইসলামের সমালোচনা বন্ধ করার জন্য করা হবে না। এতে বলা হয়, মুসলিমবিরোধী অনুভূতিতে অনুপ্রাণিত, ছকবদ্ধ চিন্তায় সংহত ও বিভিন্ন মাধ্যমে বর্ণবাদী ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে করা ‘হেট ক্রাইম’ মূলত মুসলিমদের জন্য বৈষম্যমূলক আচরণ। তাই ইসলাম বিদ্বেষের সংজ্ঞায়ন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, বিশ্বাস বা উত্তরাধিকারের জন্য ব্রিটিশ মুসলিম ও অন্যদের ঘৃণা করা ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে, অনেকেই বলছেন ইসলাম বিদ্বেষের একটি সংজ্ঞা প্রতিষ্ঠা করা হলে তা ধর্মান্ধতা ও বিভাজন মোকাবিলার উদ্যোগকে শক্তিশালী করবে। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সতর্কভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।’