চার বছরের মধ্যে ২০১৭ সালে কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে: জাতিসংঘ

চার বছরের মধ্যে ২০১৭ সালেই প্রথম কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়েছে। এই কার্বন নিঃসরণ বাড়ার জন্য বছরটিতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়েছে। ওই বছর প্রবৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য রাখতে গিয়ে বিভিন্ন দেশে কার্বন নিঃসরণরোধে জাতীয় উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

_104494695_gettyimages-184404565

আগামী ২-১৪ ডিসেম্বর পোল্যান্ডে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের আগে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করলো জাতিসংঘ। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যে কার্বণ নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে বিশ্লেষকরা বলেছেন, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালেও জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না।

গত ৯ বছর ধরে জাতিসংঘ পরিবেশ সংস্থা সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গ্রিনহাউজ গ্যাসের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিঃসরণ হার মূল্যায়ন করছে। এতে মূলত বিশ্বের জন্য সহনীয় গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুত ও গৃহীত পদক্ষেপের পার্থক্যটাই তুলে ধরা হয়। এই পার্থক্যটা মূলত আমরা এখন যে অবস্থায় আছি আর যে অবস্থায় যাওয়া প্রয়োজন তার মধ্যে তুলনা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালেই এই ব্যবধান সবচেয়ে বেশি রয়েছে বলে লক্ষ্য করা গেছে।  

জাতিসংঘ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালে শিল্প কারখানা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে বৈশ্বিক কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ স্থিতিশীল ছিল। এই সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিও ধীরগতিতে এগিয়েছে। কিন্তু ২০১৭ সালে জিডিপি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্বন নিঃসরণও ১.২ শতাংশ বেড়েছে।

এই বৃদ্ধির পরিমাণকে সামান্য মতে হতে পারে। কিন্তু এটাকে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যায়ন করা উচিত। জাতিসংঘের মতে, ওই সীমার মধ্যে তাপমাত্রা ধরে রাখতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ এখনকার চেয়ে ৫৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। প্রতিবেদনে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে এই শতাব্দীর শেষে বিশ্বের তাপমাত্র ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে।

নবায়নযোগ্য শক্তির খোঁজ করছে অনেক দেশ

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্র কার্বন নিঃসরণে নিজেদের প্রতিশ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।  এছাড়া ব্রাজিল, চীন ও জাপান বর্তমানে সঠিক অবস্থানে রয়েছে। আর ভারত, রাশিয়া ও তুরস্ক নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে। বিভিন্ন দেশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে মনযোগ দেওয়া শুরু করেছে।

তবে প্রতিবেদনের ইতিবাচক বিষয় হলো, জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপের জন্য ‘নন স্টেট অ্যাকটরস’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এতে উঠে এসেছে। এই ‘নন স্টেট অ্যাকটরসে’র মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক সরকার, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়, বর্তমানে ১৩৩টি দেশের ৭ হাজারের বেশি নগর কর্তৃপক্ষ ও ৬ হাজারের বেশি কোম্পানি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ৩৬ লাখ কোটি ডলার খরচ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে আশা প্রকাশ করে বলা হয়, বিশ্বে ৫ লাখের বেশি কোম্পানি ব্যবসা করছে। তারা সবাই যদি এই খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখে তাহলে কার্বন নিঃসরণ ব্যবধান কমানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আসবে।

প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ও পোটসড্যাম ইনস্টিটিউট অব ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ গবেষক ড. গুনার লুদারার বলেন, ‘এখনও কথা ও কাজের মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর ব্যবধান রয়েছে। আমাদের জলবায়ুকে স্থিতিশীল রাখার জন্য বিশ্বের সরকারগুলোর একমত হওয়া লক্ষ্য ও ওই লক্ষ্য অর্জনে গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে’। এই বিজ্ঞানীর মতে, এই ব্যবধান দূর করার জন্য সব দেশকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সূত্র: বিবিসি।